Home বিশেষ প্রতিবেদন দেশসেরা উদ্ভাবনের জন্য ৭ জনকে এটুআই-এর অর্থায়ন

দেশসেরা উদ্ভাবনের জন্য ৭ জনকে এটুআই-এর অর্থায়ন

দেশের গৃহস্থালি এবং শিল্প-প্রতিষ্ঠানে পানি ব্যবহারের জন্য স্মার্ট মিটার ও সাব-মিটার তৈরি, গর্ভবর্তী নারীদের ডিজিটাল উপায়ে গর্ভাবস্থার গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক তথ্য পর্যবেক্ষণ এবং সরকারি অফিসের নথির জন্য কাস্টমাইজড পত্র তৈরির ক্ষেত্রে সাতটি উদ্ভাবনী আইডিয়া দিয়ে সেরা উদ্ভাবক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন দেশের সাত উদ্ভাবক। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিএএফ শাহীন হলে এটুআই আয়োজিত অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ‘ওয়াটার ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ-২০২১’, ‘প্রেগনেন্সি মনিটরিং ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ ২০২২’ এবং ‘লেটার বিল্ডার ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ ২০২২’-এর বিজয়ী উদ্ভাবকদের মাঝে সিডমানিসহ পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম, এমপি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, এমপি বিজয়ী উদ্ভাবকদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর।

সারাদেশ থেকে আসা তিনশত এর অধিক উদ্ভাবনী আইডিয়া থেকে প্রাথমিক যাচাই-বাছাই, বুটক্যাম্প, গ্রুমিং এবং টেকনিক্যাল ইভালুয়েশন প্যানেলসহ কয়েকটি ধাপের মাধ্যমে সম্মানিত বিচারকমন্ডলী সাতটি আইডিয়াকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেন। উদ্ভাবক খালেদ আশরাফকে ডিজিটাল মাতৃত্ব প্রকল্পের জন্য ৯০ লাখ, মেহেদী হাসানকে মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্য উন্নয়নে প্রযুক্তির ব্যবহার প্রকল্পের জন্য ৬০ লাখ, হাসিব উদ্দীনকে সেন্টিনেল টেকনোলজিস প্রকল্পের জন্য ৩৩.২০ লাখ, আশিকুর রহমান তানিমকে ওয়াটার ওয়াইজ থিঙ্ক প্রকল্পের জন্য ১৮.৫০ লাখ, আহমেদ নাসিফ হোসাইন অয়নকে এডভান্সড মিটারিং সিস্টেম প্রকল্পের জন্য ২০ লাখ, মো: খালেদ হাসান মোর্শেদুল বারিকে ওয়াশ মেট্রিক প্রকল্পের জন্য ২৮.৩২ লাখ, এএইচএম রেজওয়ানুল ইসলামকে পানি-ধী প্রকল্পের জন্য ২৫ লাখ টাকার সিডমানি এবং সার্টিফিকেট তুলে দেওয়া হয়।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প অর্জনে উদ্ধাবনকে প্রাধান্য দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের ছোট আয়তনের দেশে জনসংখ্যা অনেক বেশি। এই মানুষগুলোকে উন্নত জীবন দেওয়া, ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার পাশাপাশি উন্নত করার লক্ষ্যে অনেকগুলো ইস্যু সামনে আনতে হবে। যাতায়াত, শিক্ষা, বিদ্যুৎ, পানিসহ নানান বিষয়ে আরও উন্নয়ন প্রয়োজন। ভবিষ্যতে অসংখ্য ইন্ডাস্ট্রি হবে, বাসা-বাড়ি বাড়বে। বাংলাদেশের সবাইকে উন্নত করতে হলে দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদের পাশাপাশি বিদেশের রিসোর্সকে আহরণ করে নিতে হবে। উন্নত দেশগুলো হাইটেক প্রযুক্তির দিকে এগিয়ে গেছে। সেজন্য সে দেশগুলো কম শ্রমের বিনিময়ে তাদের লক্ষ্য পূরণ করছে। এক্ষেত্রে ইন্ডাস্ট্রিলাইজেশনের উদ্ভাবন প্রয়োজন। এখন পানি একটা বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়াচ্ছে। স্থানীয় সরকারের মন্ত্রী হিসেবে পানি সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানের কথা চিন্তা করতে হবে। পানির ব্যবহারের ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হতে হবে। উন্নত দেশে পানি ব্যবহার করার পর সেটা আবার রিসাইকেল করে পুনঃব্যবহার করছে। এছাড়া গর্ভবতী নারীদের নিয়ে উদ্ভাবন সম্পর্কে জানতে পেরেছি। বিষয়টি ছোট কিন্তু এর ইমপ্যাক্ট বিশাল। প্রযুক্তির উদ্ভাবনের মাধ্যমে মানুষের জীবনকে আরও সহজ করা যায়। এটুআই ও আইসিটি বিভাগ এমন উদ্ভাবনী উদ্যোগের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন বায়স্তবায়নে কাজ করে চলছে। এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। দেশের সকল মানুষের স্বার্থে এটা আমাদের সবার দায়িত্ব।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, আমরা সরকারি-বেসরকারি এবং একাডেমিয়ার পার্টনারশিপের ভিত্তিতে নতুন নতুন উদ্ভাবনকে অনুপ্রাণিত করছি। পাশাপাশি সেই উদ্ভাবকের স্বপ্ন বাস্তবায়নের সকল ধরনের সহযোগিতা প্রত্যেকটি ধাপে ধাপে দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। আইডিয়া থেকে কমার্শিয়ালাইজেশন কীভাবে করা যায় তা নিয়ে কাজ করছি। তার মূল কারণটা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী যে স্বপ্নের কথা বলেছেন, ২০৪১ সাল নাগাদ আমরা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ একটি দেশ হবো, উন্নত আয়ের দেশ হবো, মাথাপিছু আয় সাড়ে ১২ হাজার ডলার পৌঁছাতে হবে। তার জন্য আমাদের আত্মনির্ভরশীল হতে হবে তবে আত্মকেন্দ্রিক নয়। এটুআই ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশন বাস্তবায়নের শুরু থেকে এই ১৪ বছরে সরকারি-বেসরকারি খাত, ব্যবসায়ী, উদ্ভাবক এবং গবেষক প্রত্যেকের সাথে একটা সংস্কৃতি তৈরি করেছে এটা আগামী ১০০ বছর দেশ ও জাতির কাজে লাগবে। আমরা ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করবো নগর পরিকল্পনায়, পরিবেশ রক্ষায়, পানির গুণগত মান নিশ্চিতকরণে ও পণ্য সরবরাহে। সেই ড্রোনটা আমরা বানাতে চাই বাংলাদেশের মাটিতেই। আজকের উদ্ভাবকের মধ্যে গর্ভকালীন নারীদের পর্যবেক্ষণ ও পানির ব্যবহার ও সরকারি-বেসরকারি অফিসে ডায়নামিক লেটার তৈরির ক্ষেত্রে উদ্ধাবন দেখতে পাচ্ছি। এই উদ্ভাবনগুলো মানুষের খরচ ও সময় কমিয়ে দেবে। দেশের স্বার্থে সবাইকে একযোগে কাজ করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।

এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দর্শন ছিল অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়া। এই দর্শন নিয়ে কাজ করে চলেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তাঁরই লক্ষ্যে এটুআই ইনোভেশন ফান্ড সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি সেতুবন্ধন করে দেয়, একইসঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল সেক্টরকেও যুক্ত করে চলেছে। নতুন নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশের যে রূপকল্প তা অর্জনে সর্বদা পাশে থাকবে এটুআই।

Exit mobile version