ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন আগামী পহেলা বৈশাখ (১৪ই এপ্রিল ২০২৩) থেকে দেশব্যাপী ম্যানুয়াল ভূমি উন্নয়ন কর গ্রহণ বন্ধ হয়ে যাবে। এরপর থেকে কেবল অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর গ্রহণ করা হবে। অনলাইনে কর দেওয়ার পর অনলাইনেই কিউআর কোড সমৃদ্ধ দাখিলা (রশিদ) সংগ্রহ করতে পারবেন ভূমি উন্নয়ন করদাতা। ফলে ক্যাশলেস ই-নামজারির মত সারাদেশে ক্যাশলেস ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থা চালু হবে।
গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সচিবালয় বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত ‘বিএসআরএফ সংলাপে’ এক প্রশ্নের জবাবে ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এই মন্তব্য করেন। বিএসআরএফ সভাপতি তপন বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক এই সময় উপস্থিত ছিলেন।
ভূমিমন্ত্রী আরও বলেন কোনো জামির মালিকানার প্রমাণক হিসেবে ‘সার্টিফিকেট অফ ল্যান্ড ওনারশিপ’ তথা সিএলও নামক একটি মাত্র দলিল ইস্যু করা হবে। সরকারি রেকর্ড অনুযায়ী জমির মালিকের তথ্য, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের তথ্য সহ সামগ্রিক তথ্যাদি এবং ভূমির অবস্থানগত তথ্য যেমন জিও লোকেশন সহ জমির মৌজা ম্যাপের তথ্য এই একটি দলিলের সাহায্যে নিশ্চিত করা যাবে। মালিকানা প্রমাণের জন্য আলাদা আলাদা কয়েক ধরনের দলিলাদি যেমন ডিড রেজিস্ট্রেশন, খতিয়ান কিংবা মৌজা ম্যাপ বহনের প্রয়োজন হবেনা – এতে সাধারণ মানুষের ঝামেলা বহুলাংশে কমে যাবে। একই সাথে ভূমির মালিক এমন নাগরিকদের জন্য স্মার্ট কার্ডও ইস্যু করা হবে যেখানে কার্ড বাহকের মালিকানাধীন জমির তথ্যের ডিজিটাল সংস্করণ থাকবে এবং সকল সরকারি রেকর্ড অনুযায়ী সেসব জমির পূর্বতন সকল তথ্যও এতে থাকবে।
এর আগে সাইফুজ্জামান চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, তার উপর প্রধানমন্ত্রীর আস্থা ছিল বলেই তাকে তিনি দেশের অন্যতম একটি জটিল সেক্টর সংস্কারের নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। মন্ত্রী এই সময় ভূমি সেক্টরে ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম এবং ভূমি আইন সংস্কারের উপর আলোকপাত করেন। আমরা ভূমি ব্যবস্থাপনায় টেকসই ও গুনগত পরিবর্তনে জোর দিচ্ছি – তিনি যোগ করেন।
বক্তব্যের পর উপস্থিত সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার’ এবং ‘ভূমি ব্যবহার ও মালিকানা স্বত্ব’ আইনের খসড়া এমনভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে যেন এর আইনি প্রয়োগ ভূতাপেক্ষভাবে সর্বশেষ জরিপ পর্যন্ত কার্যকর হয়। অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, অতীতের যেকোনো সময় থেকে এখন ভূমি মন্ত্রণালয় এবং এর মাঠ পর্যায়ের গণকর্মচারীদের জবাবদিহির আওতায় আনা হয়েছে। অসাধু কার্যক্রম চালানোর জন্য অনেক ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তিনি এ সময় বলেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সহ দেশের সবার ভূমির অধিকারের ব্যাপারে সরকার আন্তরিক এবং দেশের অপেক্ষাকৃত অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করছে।
গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রের দর্পণ হিসেবে উল্লেখ করে ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি সমাজে বা রাষ্ট্রে যা ঘটছে, তার বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি অবিকৃতভাবে জনসাধারণের সামনে তুলে ধরার আহবান জানান।
বিএসআরএফ সভাপতি তপন বিশ্বাস অনুষ্ঠানের শুরুতে ভূমিমন্ত্রীর সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন বিএসআরএফ সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক। বিএসআরএফ সহ-সভাপতি মোতাহের হোসেন শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন; তিনি তাঁর বক্তব্যের এক পর্যায়ে ভূমি সেবা গ্রহণে নিজ সন্তোষজনক অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। সংলাপে বাংলাদেশ সচিবালয় বিটে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।