ডেটা স্টোরেজ ও ডিজাস্টার রিকভারি সেবায় দেশের একমাত্র সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড (বিডিসিসিএল) ওরাকল ক্লাউড ইনফ্রাস্ট্রাকচার (ওসিআই) ডেডিকেটেড রিজিয়ন বাস্তবায়ন করেছে। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ক্লাউডভিত্তিক ডিজিটাল রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় সহায়ক হিসেবে ভূমিকা পালন করবে এটি। বাংলাদেশের নিজস্ব সরকারি ক্লাউড সেবা স্থানীয়ভাবে ক্লাউড অবকাঠামো ও ডাটার সুরক্ষা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিজিটাল নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করবে।
সরকারি সার্বভৌম (সভরেন) ক্লাউড জাতীয় নিরাপত্তা, ই-গভর্ন্যান্স, এবং ই-ফাইলিংসহ স্বাস্থ্য ও সামাজিক পরিষেবার মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে থেকেই পরিচালনা করবে। ওসিআই ডেডিকেটেড রিজিয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের ৩০ টির বেশি সরকারী সংস্থা এখন ওরাকলের সব ক্লাউড সেবা ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে, যা একইসঙ্গে সুশাসন, নিয়মতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতা অনুসরণ ও ডাটা নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
এছাড়া, ওসিআই ডেডিকেটেড রিজিয়ন বিডিসিসিএলকে উল্লেখযোগ্যভাবে দ্রুত ও সাশ্রয়ী সুবিধা দেবে, যা তাদের ব্যবহারকারীদের নতুন অ্যাপ্লিকেশন ও অনলাইনভিত্তিক সেবা দ্রুত ও কার্যকর করতে সাহায্য করবে। ওসিআই ডেডিকেটেড রিজিয়নের মাধ্যমে ওরাকলের পাবলিক ক্লাউডের সব পরিষেবা, নিয়মিত আপডেট, ব্যয় সাশ্রয় ও সার্বিক সার্ভিস লেভেল এগ্রিমেন্ট (এসএলএ) সুবিধা পাওয়া যাবে।
”স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১ গড়ে উঠছে ডিজিটাল বাংলাদেশের তৈরি করা লঞ্চ প্যাডের ওপর, যেখানে ডেটাই হবে নতুন মুদ্রা এবং এটি দীর্ঘমেয়াদী ডিজিটাল রূপান্তরের মূল চাবিকাঠি হয়ে উঠবে, যাতে উপকৃত হবে বাংলাদেশের সব নাগরিক।” বলেন জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি, প্রতিমন্ত্রী, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকার। তিনি বলেন, “এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রধান ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে বাংলাদেশের সার্বভৌম ক্লাউড, যা গড়ে উঠেছে ওরাকল ওসিআই ডেডিকেটেড রিজিয়নের মাধ্যমে। আধুনিক অর্থনীতির জন্য আমাদের ডিজিটাল অবকাঠামোকে শক্তিশালী করতে এবং সাইবার নিরাপত্তা সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করবে এটি। ওরাকলের সহযোগিতায় আমরা একটি সত্যিকারের স্মার্ট সরকার গঠণ করতে পারব বলে আশা করছি।
একক ব্যবহারকারীর জন্য ডিজাইন করা ওরাকল ওসিআই ডেডিকেটেড রিজিয়ন এপিআই অপারেশন ও মেটাডেটাসহ বাংলাদেশের সব সরকারি ডেটাকে দেশের ভিতরে সীমাবদ্ধ রাখতে বিডিসিসিএলকে সক্ষম করে তুলবে। ওসিআই ডেডিকেটেড রিজিয়নের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যবস্থাপনা সক্ষমতা এবং ওরাকলের পাবলিক ক্লাউডে আসা নতুন সব ফিচার সংযোজনের সুবিধা পাওয়া যাবে। ওরাকল হল একমাত্র হাইপারস্কেলার যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সুবিধা দিতে সক্ষম এবং এটি ডেডিকেটেড, পাবলিক এবং হাইব্রিড ক্লাউড প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী শতাধিক ক্লাউড সার্ভিসেস দিতে পারে। ওরাকলের সার্বভৌম এআই সক্ষমতা ব্যবহার করে বাংলাদেশ সরকার নিজেদের ডাটা সেন্টার ও এআই অবকাঠামো ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা করছে।
বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ সরকারের ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শামসুল আরেফিন বলেন, “ক্লাউডভিত্তিক রূপান্তরের যাত্রাকে নিরাপদে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যেতে সরকারি সংস্থাগুলোকে সহায়তা করবে ওরাকলের মাধ্যমে বাস্তবায়িত বাংলাদেশের সরকারি সার্বভৌম ক্লাউড। নাগরিকদের ব্যয় সাশ্রয়ী ও নিরাপদভাবে আধুনিক পরিষেবা প্রদানে ক্লাউডের শক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা অর্জন করবে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো।
“কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি, পরিমাপযোগ্যতা ও ব্যয় সাশ্রয়ের জন্য নিরাপদ পদ্ধতি হিসেবে সরকারগুলোর কাছে ক্লাউড-ফার্স্ট নীতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।” বলেন গ্যারেট ইলগ, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং জেনারেল ম্যানেজার, জাপান ও এশিয়া প্যাসিফিক, ওরাকল। তিনি বলেন, “ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের মাধ্যমে সরকারগুলোর
জন্য যেমন উদ্ভাবনী সেবা প্রদানের সুযোগ তৈরি হয়, তেমনি নাগরিকদের আরো ভালো সেবা দিতে সরকারি কর্মীদের সক্ষমতা বাড়ানো যায়। বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব ডেটা সেন্টারের মধ্যেই একটি সম্পূর্ণ ক্লাউড সলিউশন দিচ্ছে ওসিআই ডেডিকেটেড রিজিয়ন। এটি একটি দ্রুত, দক্ষ, নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী প্ল্যাটফরম নিশ্চিত করে, যা অ্যাপ্লিকেশনের আধুনিকায়ন, উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করা ও ডেটা সার্বভৌমত্বের প্রয়োজনীয়তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করবে।
“ওরাকলের সাথে বাংলাদেশের সরকারি সার্বভৌম ক্লাউড প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের একটি কার্যকর ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে, যা নাগরিক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদা পূরণে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়াবে। আমরা আশা করছি, এ ক্লাউডের ব্যবহার সরকারি সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন নিয়ে আসবে, যা দেশের ডিজিটাল ভবিষ্যতের পথে সহায়ক হবে”, বলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বলেন, “২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিডিসিসিএল ওরাকলের সঙ্গে কাজ করছে, যা অত্যন্তউৎসাহব্যঞ্জক। প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ বিরাজমান থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো তাদের উচ্চ-মানের প্রযুক্তিগত দক্ষতার কারণে বাংলাদেশের ডিজিটাল এ রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় বড় ভূমিকা পালন করে যাবে। স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট নীতি ও আইনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে ধারাবাহিকভাবে সক্রিয় থাকবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। “
বাংলাদেশ সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ বিডিসিসিএলের মাধ্যমে ওসিআই ডেডিকেটেড রিজিয়ন বাস্তবায়ন করেছে।
ওরাকল ফিউশন ক্লাউড অ্যাপ্লিকেশন স্যুটের মাধ্যমে সমন্বিত ক্লাউড ব্যবহারের অভিজ্ঞতা দেবে ওরাকল ডেডিকেটেড রিজিয়ন, যার আওতায় রয়েছে ওরাকল ফিউশন ক্লাউড এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং (ইআরপি), ওরাকল ফিউশন ক্লাউড হিউম্যান ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট (এইচসিএম), ওরাকল ফিউশন ক্লাউড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট (এসসিএম), এবং ওরাকল অ্যাডভার্টাইজিং অ্যান্ড কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স (সিএক্স)।