বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তি বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকায় চাকরি মেলার আয়োজন করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। ২০১৫ সাল থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এর উদ্যোগে এই মেলা আয়োজন করা হচ্ছে। উক্ত আয়োজনের সহযোগিতায় আছে সেন্টার ফর সার্ভিসেস অ্যান্ড ইনফরমেশন অন ডিজঅ্যাবিলিটি (সিএসআইডি) এবং এনজিও বিষয়ক ব্যুরো।
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, শনিবার সকালে ঢাকার আগারগাঁওয়ে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর অফিস ভবনে উক্ত মেলাটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে চাকরি মেলা ২০২৪ এর শুভ উদ্বোধন করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি।
উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব জনাব মোঃ সামসুল আরেফিন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এনজিও বিষয়ক ব্যুরো এর মহাপরিচালক (গ্রেড-১) মোঃ সাইদুর রহমান এবং সিএসআইডি এর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিসিসি এর প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক মোঃ গোলাম সারওয়ার। উক্ত অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিসিসি এর নির্বাহী পরিচালক (গ্রেড-১) রণজিৎ কুমার।
মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন যে প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিরা পরিশ্রমী। তিনি বলেন সুস্থ্য স্বাভাবিক তরুণ-তরুণীদের চেয়ে প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিরা বেশি মনোযোগ দিয়ে দায়িত্বশীলতার সাথে কর্মক্ষেত্রে সেবা প্রদান করছে। তিনি বলেন যে প্রতিবন্ধীরা আমাদের ভাই-বোন এবং তাদেরকে সুযোগ দিতে হবে। তিনি আরো বলেন প্রতিবন্ধীরা তাদের শ্রম, মেধা ও দায়িত্বশীলতা দিয়ে অন্যান্যদের চেয়ে বেশি এগিয়ে থাকবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ও বিশেষভাবে সক্ষমদের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। তিনি বলেন আমাদের দেশের কোন প্রতিবন্ধী ছেলে মেয়েরা ঘরে বসে থাকবে না। তারা পরিবার বা দেশের বোঝা হবে না। প্রতিবন্ধীদের একটু সহযোগিতা এবং সুযোগ দিলে তারা দেশের সম্পদ হয়ে বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার নেতৃত্ব দিবে। প্রতিবন্ধীদের জন্য উদ্যোক্তা মেলার আয়োজন করা হবে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, প্রতিবন্ধীদের জন্য শুধু চাকরির মেলা নয়, প্রতিবন্ধীরা উদ্যোক্তা হয়ে আরও হাজার হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। ঘরে বসেই যেনো প্রতিবন্ধীরা দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ নিতে পারেন সেজন্য “এম্পোরিয়া (emporia.bcc.gov.bd)” পোর্টাল ব্যবহারে আহ্বান জানান তিনি। একই সময়ে তিনি এনজিওগুলোতেও যেনো প্রতিবন্ধীদের চাকরি দেয়া হয় সেজন্য এনজিও ব্যুরো মহাপরিচালককে অনুরোধ জানান।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মোঃ সামসুল আরেফিন বলেন যে, কোন মানুষই ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতিবন্ধী হয় না এবং এটা প্রকৃতি প্রদত্ত। প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিরা সমাজের বোঝা নয়। তিনি বলেন যে আমাদের সমাজে পিছিয়ে পরা ব্যাক্তিদেরকে অবশ্যই আমাদের সমাজে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তিনি আরো বলেন যে প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিদেরকে আমরা উপলব্ধি করতে না পারলে তারা কখনই সামনে এগিয়ে আসতে পারবেনা। আর এই জন্যই বাংলাদেশের সংবিধানেও তাদের বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এনজিও বিষয়ক ব্যুরো এর মহাপরিচালক (গ্রেড-১) মোঃ সাইদুর রহমান সবাইকে নিয়ে একসাথে কাজ করার পাশাপাশি আমাদের সমাজকে আরো সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি আরো বলেন যে অক্ষম বা আংশিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের তুলনায় সক্ষম ব্যাক্তিদের সংখ্যা অনেক বেশি। তাই তিনি সক্ষম ব্যাক্তিদেরকে অক্ষম ব্যক্তিদের পাশে থাকার বিশেষ অনুরোধ করেন।
সিএসআইডি এর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম তার বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বিভিন্ন প্রশংসনীয় উদ্যোগ এর বিষয় তুলে ধরে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জানান। তিনি প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিদের নিজেদেরকে ধৈর্য্যসহ কর্মক্ষেত্রে লেগে থাকতে অনুরোধ করেন। সবশেষে, তিনি বাংলাদেশ সরকারের এনডিডি প্রকল্প এর কথা উল্লেখ করে বলেন যে প্রকল্পটি প্রতিবন্ধী মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছিল। তাই তিনি উক্ত প্রকল্পটি পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নেবার জন্য আইসিটি বিভাগকে বিশেষ অনুরোধ করেন।
বিসিসি এর নির্বাহী পরিচালক (গ্রেড-১) রণজিৎ কুমার চাকরি মেলা ২০২৪ এ স্বতস্ফূর্তভবে অংশ নেওয়া সকল প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন যে সবার সম্মিলিত চেষ্টায় ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের ক্ষেত্রে ইনক্লিউসিভ ডেভেলপমেন্ট এর বিষয় উল্লেখ রয়েছে। সবশেষে, সকলের সাথে প্রতিবন্ধী ব্যাক্তি বা পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠীকে সঙ্গে নিয়েই ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন তিনি।
শনিবার সকাল থেকেই ঢাকার আগারগাঁওয়ে এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর অফিস ভবনে অনুষ্ঠিত এই মেলায় অংশ নেয় ৪৮টি আইসিটি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এবং চাকরি প্রার্থী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিগণ। এর আগে সারাদেশ থেকে ৫ শতাধিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সিভি জমা দেন অনলাইনে। এছাড়া, মেলায় সরাসরি উপস্থিত হয়েও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি চাকরিপ্রার্থীরা সিভি বা জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার সুযোগ পান। যাদের তথ্য প্রযুক্তির দক্ষতা রয়েছে তাদের নিয়োগের লক্ষ্যে ইন্টারভিউ গ্রহণ করে মেলায় অংশগ্রহণ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো। কল সেন্টার এজেন্ট, ডাটা এন্ট্রি, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, অ্যানিমেশন, প্রোগ্রামিং-সহ নানা প্রকার পদের জন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তি চাকরিপ্রার্থীদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করে চাকরী মেলার শেষে নিয়োগের পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। এবার এই মেলার মাধ্যমে প্রায় ৫০ জনকে চাকরি দেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা রাখছেন আয়োজক কর্তৃপক্ষ। বেসিস, বাক্কো, ই-ক্যাব সহ বিভিন্ন ট্রেডবডি বা অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যভুক্ত আইসিটি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানসমূহ উক্ত মেলায় অংশ নেয়।
উল্লেখ্য, পূর্ব থেকেই চাকরীদাতা প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে যোগাযোগ করে চাকরী প্রার্থীদের সাক্ষাতকার গ্রহণ পর্ব শেষে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত ৩৫জন প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিদের হাতে এ আয়োজন উপলক্ষ্যে নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হয়। চাকরি মেলা উদ্বোধন শেষে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি উক্ত মেলার স্টল পরিদর্শন করেন।