কর্পোরেট গভর্নেন্স প্রতিষ্ঠায় উৎকর্ষতা সাধন এবং কোম্পানির সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে ৪৩ টি প্রতিষ্ঠানকে কর্পোরেট গভর্নেন্স এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড প্রদান করল ইন্সটিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারীজ অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি) । গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে এই স্বীকৃতি প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আইসিএসবি।
আইসিএসবি’র নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী ২০২২ সালে কোম্পানিগুলোর সাফল্যের ভিত্তিতে এই পুরষ্কার প্রদান করা হয়। এবারের আয়োজনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘প্রমোটিং গভর্নিং এক্সিলেন্স’।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় বাণিজ্য মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা টিপু মুন্সী, এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোঃ নজিবুর রহমান, চেয়ারম্যান, সিএমএসএফ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কর্পোরেট গভর্নেন্স কমিটি’র চেয়ারম্যান এম নুরুল আলম এফসিএস সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইসিএসবি’র প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহ এফসিএস ।
ডিএসই এবং সিএসই তালিকাভুক্ত ১৪ টি ক্যাটাগরিতে বিজয়ী ৪৩টি কোম্পানিকে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি টিপু মুন্সী, এমপি। গোল্ড, সিলভার ও ব্রোঞ্জ- এই তিনটি ক্যাটাগরিতে কোম্পানিগুলোকে পুরষ্কার প্রদান করা হয়।
জেনারেল ব্যাংকিং সেক্টরে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি; ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড সিলভার এবং ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।
ইসলামিক ব্যাংকিং ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি; স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড সিলভার এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।
নন-ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল ইন্সটিটিউশন ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড; বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেড সিলভার এবং ডিবিএইচ ফাইন্যান্স পিএলসি ও ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড যৌথভাবে ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।
জেনারেল ইন্স্যুরেন্স ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড; গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড সিলভার এবং পিপলস ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।
লাইফ ইন্স্যুরেন্স ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এবং প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড সিলভার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।
ফার্মাসিউটিক্যালস ও কেমিক্যাল ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড; স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি সিলভার এবং রেনেটা লিমিটেড ও নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড যৌথভাবে ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।
টেক্সটাইল ও আরএমজি ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে মতিন স্পিনিং মিলস পিএলসি; প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল পিএলসি সিলভার এবং হুয়া ওয়েল টেক্সটাইলস (বিডি) পিএলসি ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।
ফুড ও অ্যালায়েড ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার লিমিটেড; গোল্ডেন হার্ভেস্ট এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড সিলভার এবং অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।
ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনলজি ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে এডিএন টেলিকম লিমিটেড; আমরা টেকনোলজিস লিমিটেড সিলভার এবং আইটি কনসালটেন্টস লিমিটেড ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।
ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি; রানার অটোমোবাইলস পিএলসি সিলভার এবং সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেড ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।
ম্যানুফ্যাকচারিং ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে আরএকে সিরামিকস বাংলাদেশ লিমিটেড; ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড সিলভার এবং লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।
ফুয়েল অ্যান্ড পাওয়ার ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড; লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেড সিলভার এবং ডোরিন পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড সিস্টেমস লিমিটেড ও এমজেএল বাংলাদেশ পিএলসি যৌথভাবে ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।
সার্ভিস ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড; ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস পিএলসি সিলভার এবং ইনডেক্স এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।
টেলিকমিউনিকেশন্স ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে রবি আজিয়াটা লিমিটেড এবং বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড সিলভার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুন্সী, এমপি, বলেন, “এই পুরস্কার শুধু একটি স্মারক নয়; আমাদের দেশে কর্পোরেট শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের একটি মান। গত কয়েক দশকে আইসিএসবি কর্পোরেট গভর্নেন্সের ক্ষেত্রে একটি বিশ্বস্ত নাম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে যা সত্যিই প্রশংসনীয়।”
বিজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “এ ধরনের আয়োজনের ফলশ্রুতিতে এখন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলি সুশাসন এবং কমপ্লায়েন্সের বিষয়গুলো বজায় রাখতে আরও যত্নশীল হচ্ছে।”
তিনি উল্লেখ করেন যে, আইসিএসবি আমাদের দেশে উন্নত কর্পোরেট সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দক্ষ কর্পোরেট জনশক্তি তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের (সিএমএসএফ) চেয়ারম্যান এবং প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান বলেন, “এই আয়োজনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কর্পোরেট ব্যবস্থাপনায় সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা।”
বিশেষ অতিথি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, “একটি কোম্পানির সঠিক পরিচালনা নিশ্চিত করতে কোম্পানি সচিবদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইসিএসবি ব্যবসায়িক খাতে চার্টার্ড সেক্রেটারিদের সক্ষমতা ও সৃজনশীলতা বাড়াতে কাজ করছে।”
আইসিএসবি’র প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহ, এফসিএস বলেন, “ব্যবসা পরিচালনা সহজ করা, এফডিআই বাড়ানো , বিনিয়োগকারী ও স্টেকহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য আমাদের জরুরীভাবে একটি নতুন কোম্পানি আইনের প্রয়োজন। কর্পোরেট খাত দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, শুধু একটি নতুন কোম্পানি আইন এই সমস্যাগুলো সমাধান করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি আরও গতিশীল করতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন, চার্টার্ড/কোম্পানি সচিবগণ বিশ্বব্যাপী কোম্পানি আইনের পরিপালনকারী । তাই তিনি মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী এবং বাণিজ্য সচিবকে বাংলাদেশে আইসিএসবি পেশার বিকাশ এবং আরজেএসসিতে নিবন্ধিত ৩ লাখের বেশি কোম্পানিকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য কোম্পানি আইন সংশোধনী বিল, ২০২৩-এ আইসিএসবি পেশাকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য অনুরোধ করেন। কোম্পানি সেক্রেটারি কোম্পানি ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করছেন। বিশ্বব্যাপী কোম্পানি সেক্রেটারিকে কোম্পানির চীফ গভর্নেন্স অফিসার বলা হয়। পরিশেষে তিনি পুরস্কার বিজয়ীদের অভিনন্দন জানান এবং আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই পুরষ্কার সর্বক্ষেত্রে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের প্রেরণা হয়ে থাকবে।”
আইসিএসবি’র কর্পোরেট গভর্নেন্স কমিটি’র চেয়ারম্যান এম নুরুল আলম, এফসিএস বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্য হল সুশাসনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কোম্পানি এবং তাদের ব্যবস্থাপনাকে স্বীকৃতি প্রদান করা। একইসাথে কোম্পানি ব্যবস্থাপনাকে বিএসইসি প্রদত্ত কর্পোরেট গভর্নেন্স কোড, কোম্পানি আইন ১৯৯৪ এবং বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত কর্পোরেট অনুশীলনগুলো অনুসরণ করতে উৎসাহিত করা।”
পরিশেষে মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আল মামুন এফসিএস, ট্রেজারার, আইসিএসবি ইন্সটিটিউটের পক্ষ থেকে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন পেশাজীবী, দেশের নেতৃস্থানীয় কর্পোরেট হাউসের চেয়ারম্যান, পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ, ইনস্টিটিউটের সদস্যমণ্ডলী এবং সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অতিথিবৃন্দ বাংলাদেশের কর্পোরেট সেক্টরের গভর্নেন্স প্রতিষ্ঠায় এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতে আইসিএসবি’র ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন।