গতকাল রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকায়, সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অপারেটর্স গ্রুপের (স্যানগ-৩৯) আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) স্যানগ-৩৯ সম্মেলনের প্রধান আয়োজক এবং আইএসপিএবি এই নিয়ে ষষ্ঠ বারের মতো স্যানগ সম্মেলনের আয়োজন করছে। সম্মেলনের সার্বিক সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি) এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, তপন কান্তি ঘোষ। প্রধান অতিথি তার বক্তব্য বলেন, বাংলাদেশ ১৭ কোটি মানুষের দেশ, এই বিপুল আমাদের জন্য বিরাট সম্পদ। জনশক্তির একটা বড়অংশ বহির্দেশ থেকে বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা পাঠায়, কিন্তু তাদের মধ্যে বেশিরভাগের কাজের দক্ষতা না থাকায় স্বল্প বেতনে কাজ করতে হয়। এজন্যই আমাদের দক্ষ জনবল দরকার এবং এই ধরনের সম্মেলন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা দক্ষ জনবল তৈরি করতে পারি। তিনি আরো বলেন আমাদের দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সংখ্যা এখনো অনেক কম। যেখানে ইউরোপ আমেরিকায় ৮৬% সেখানে আমাদের দেশে কেবলমাত্র 26% সুতরাং এখানে অনেক উন্নতি করার অবকাশ রয়েছে। তিনি আইএসপিএবি’র মোট সদস্য সংখ্যা ২৭০০ শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি সংগঠনকে দেশের ইন্টারনেটের প্রসারে কাজ করার জন্য তাগিদ দেন। এই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।
বিশেষ অতিথি, অতিরিক্ত সচিব ও কো-অর্ডিনেটর আইপিবিসি, আব্দুর রহিম খান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তার বক্তব্যে বলেন পাঁচ দিন ব্যাপী এই কর্মশালা শেষে আজকে আমি বলতে পারি যে, আমরা এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আছি এবং আমাদের এই ট্রেনিং এর মাধ্যমে উৎকর্ষতা অর্জন করে আমরা সোনার বাংলা গড়ার দিকে অগ্রসর হব। তিনি উল্লেখ করেন, বাঙালি যে পারে, বাঙালি যে করে-তা এই সম্মেলন আরো একবার প্রমাণিত হলো! তিনি প্রশিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের কারিগরী জ্ঞান নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে কাজে লাগানোর তাগিদ দেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইএসপিএবি’র প্রেসিডেন্ট মোঃ ইমদাদুল হক। তিনি তার বক্তব্যে বলেন গত ছয় মাসের মধ্যে বিডিআইএক্স এবং আইএসপিএবি’র নিক্স প্রায় ৯০ জিবিপিএস ট্রাফিক ট্রান্সমিট করছে। অচিরেই আইএসপিএবি-নিক্স এক নম্বর হতে যাচ্ছে। পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে চিটাগাং এবং খুলনায় নিক্সের নতুন পপ স্থাপিত হবে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা পেলে আমরা অচিরেই প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে নিক্স পপ স্থাপন করতে পারব। বিভাগীয় শহরগুলোতে নিক্সের পপ স্থাপন হলে অপারেটরসগণ কম খরচে এবং সাচ্রায়ী মূল্যে দ্রুতগতি সম্পন্ন ইন্টারনেট পাবে। আমরা চাচ্ছি আমাদের ক্যাশ সার্ভারগুলো নিক্সের সাথে সংযুক্ত থাকবে, তাহলে সাইবার নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে এবং এই নিরাপত্তা নিয়ে সরকারের আর কোন সংশয় থাকবে না। ফলে দেশের তথ্য দেশেই থাকবে, দেশের টাকা দেশেই থাকবে, ব্যবসায়ীরাও লাভবান হবেন।
আইএসপিএবি নিক্স স্থাপনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা এবং পৃষ্ঠপোষকতা জন্য তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং অতিরিক্ত সচিবকে ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইএসপিএবি’র সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভূঁঞা।
উল্লেখ্য, গত ১০ মে ২০২৩ থেকে ১৩ই মে ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে শুরু হয় এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা। প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা ও ভারত সহ বেশ কয়েকটি দেশের মোট ১২১ জন শিক্ষণার্থী। এছাড়াও রয়েছেন বাংলাদেশের ৪ জন সহ মোট ১১জন ফেলোশিপ প্রাপ্ত নেটওয়ার্ক প্রকৌশলী। প্রশিক্ষণ কর্মশালার ভেন্যু হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের তিনটি রুমে বিভক্ত হয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়: (১) বোর্ডরুমে অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বর্ডার গেটওয়ে ইন্টারনেট প্রোটোকল (বিজিপি) এবং ইন্টারনেট প্রোটোকল (আইপি) এর আধুনিক সংস্করণ আইপিভি-৬ প্রয়োগের কারিগরি কৌশল হাতে কলমে শিক্ষা নিয়েছেন নিবন্ধিত ৫৫ জন শিক্ষার্থী। (২) মধুমতি হলে অনুষ্ঠিত নেটওয়ার্ক সুরক্ষা বিষয় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন মোট ৪০ জন শিক্ষার্থী। (৩) তুরাগ হলে নেটওয়ার্ক অটোমেশন নিয়ে চলমান কারিগরি কর্মশালায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন মোট ৩১ জন শিক্ষার্থী।
প্রধান অতিথি সমাপনী অনুষ্ঠানে আইএসপিএবি’র ইন্টারনেট ল্যাব উদ্বোধন করেন। উল্লেখ্য, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতা এবং পৃষ্ঠপোষকতায় এই ল্যাব স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। অনুষ্ঠানে শিক্ষণার্থীদের মাঝে সনদ বিতরণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।