দেশের বিপিও/আউটসোর্সিং শিল্পের জন্য নিবেদিত একক ও কেন্দ্রীয় বাণিজ্য সংস্থা ‘বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ কনট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো)’-এর উদ্যোগে ও বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত ‘বিজনেস প্রোমোশন কাউন্সিল’-এর সার্বিক সহযোগিতায় মে-জুলাই মাসব্যাপী দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে বাংলাদেশের বিপিও শিল্পের সর্ববৃহৎ, শীর্ষ সম্মেলন “বিপিও সামিট ২০২৩” । এ নিয়ে পঞ্চমবার আয়োজিত বিপিও সামিটের এবারের কিস্তিতে প্রথমবারের মত থাকছে “বিভাগীয় বিপিও সামিট”, যা পর্যায়ক্রমে উদ্যাপিত হবে। আর তারই সূত্র ধরে গত মঙ্গলবার ২৩ মে, ২০২৩-তারিখে রাজশাহী বিভাগের কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে “ক্যারিয়ার ক্যাম্পেইন”-এর পর বুধবার ২৪ মে সিংড়া, নাটোরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাড়ম্বরে “বিভাগীয় বিপিও সামিট ২০২৩”-যাত্রা শুরু হয়।
বিপিও সামিটের বিভাগীয় পর্যায়টি দু’টি পর্বে অনুষ্ঠিত হয়। তার মধ্যে প্রথম পর্ব (ক্যারিয়ার ক্যাম্পেইন) অনুষ্ঠিত হয় দুই ধাপে, যথা- (১) ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং বিষয়ক কর্মশালা; (২) সিভি সংগ্রহ এবং চাকুরি মেলা। অতঃপর দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হয় তিন ধাপে, যথা- (১) উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও পলিসি ডায়ালগ সেশন; (২) ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং সেশন ও চাকুরি মেলা এবং (৩) সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
প্রথম পর্বের অংশ হিসেবে রাজশাহী বিভাগে ‘ক্যারিয়ার ক্যাম্পেইন’ উদ্যাপিত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, রাজশাহী কলেজ এবং গোল-ই-আফরোজ সরকারী কলেজে। প্রথম ধাপের ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং বিষয়ক কর্মশালায় বিপিও শিল্পের সম্ভাবনাময় দিকগুলো শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরে এ খাতে আকর্ষণীয় ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে উৎসাহ যোগানো হয়। অন্যদিকে চাকুরি মেলার মধ্য দিয়ে বিপিও শিল্পে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী অসংখ্য মেধাবী শিক্ষার্থীদের সিভি সংগ্রহ করা হয়। যোগ্য প্রার্থীদের জন্য ছিল নিয়োগেরও ব্যবস্থা। এই ক্যাম্পেইন বিপিও শিল্পে দক্ষ জনবল তৈরিতে অপরিসীম ভূমিকা রাখবে বলেই বাক্কোর বিশ্বাস।
দ্বিতীয় পর্বের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয় সিংড়া, নাটোরের উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ‘বিপিও শিল্পের বর্তমান অবস্থান ও ভবিষ্যৎ’ প্রসঙ্গে প্রবন্ধ উপস্থাপনের সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত সুধীজনের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাক্কো সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন।
বাক্কো সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ তাঁর বক্তব্যে বলেন- “সম্ভাবনাময় বিপিও শিল্প এখন শুধুমাত্র ঢাকা কেন্দ্রিক নয় বরং ঢাকার বাইরেও এর ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ঢাকার বাইরে বিপিও শিল্পের সম্প্রসারণ করতে নিরলস কাজ করছে বাক্কো। তারই উদ্যোগ এই “বিভাগীয় বিপিও সামিট ২০২৩।”
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি- ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক এমপি তাঁর বক্তব্যে বলেন- “অধিক জনসংখ্যা কখনো একটি দেশের বোঝা নয়, দেশের জনসংখ্যা সে দেশের সম্পদে পরিণত হয়, যখন তারা বিভিন্ন কর্মে দক্ষতা অর্জনে সক্ষম হয়। বিপিও তথা আউটসোর্সিং শিল্পে যেকেউ সহজেই তার ক্যারিয়ার গড়তে পারে এবং সফল হতে পারে । সরকার বর্তমানে দেশে শিক্ষিত জনশক্তির দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রকল্প ও অবকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে । দেশে এবং বিদেশে বাংলাদেশের বিপিও শিল্পের সম্প্রসারণে সরকার সবসময় বাক্কোকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।” এরপর তিনি বিপিও শিল্পের উদ্বোধন ঘোষণা করেন এবং সিংড়া, নাটোর থেকে বিভাগীয় পর্যায়ে “বিপিও সামিট বাংলাদেশের ২০২৩” এর শুভসূচনা করায় বাক্কোকে ধন্যবাদ জানান।”
অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন আবু নাছের ভূঁঞা, জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোঃ সাইফুর রহমান, পিপিএম, পুলিশ সুপার, নাটোর; ইকবাল বাহার জাহিদ, প্রেসিডেন্ট, ফাউন্ডার ও মেন্টর, নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন; নাজনীন নাহার, সভাপতি, বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম (বিআইজেএফ) এবং বাক্কো কার্যনির্বাহী কমিটি থেকে উপস্থিত ছিলেন অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আমিনুল হক; পরিচালক একেএম আহমেদুল ইসলাম বাবু, মুসনাদ ই আহমেদ, ডা. তানজিবা রহমান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ‘বাক্কো লোকাল মার্কেট ডেভেলপমেন্ট’ উপকমিটির চেয়ারম্যান মির্ধা মোঃ মাহফুজ-উল-হক চয়ন।
তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজিত ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং সেশন ও চাকুরি মেলা শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ইতি টানা হয় বিভাগীয় আয়োজনের।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং ‘বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ কনট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো)’-এর উদ্যোগে ২০১৫ সাল থেকে শুরু হয়ে ধারাবাহিকভাবে ২০১৬, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে বিপিও শিল্পের শীর্ষ ও সর্ববৃহৎ আয়োজন- “বিপিও সামিট বাংলাদেশ” সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে; যেখানে বরাবরই প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। সফলতার সাথে আয়োজিত এ সামিটসমূহ দেশে এবং দেশের বাইরে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। উদীয়মান বিপিও/আউটসোর্সিং খাতের অবস্থান বুঝতে এই সামিটে অংশ নিয়েছিলেন অসংখ্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শীর্ষস্থানীয় আইসিটি বিশেষজ্ঞ, গবেষক, সরকারী নীতিনির্ধারক, শিক্ষার্থী এবং বিপিওখাতের অভ্যন্তরীণ নেতৃবৃন্দ। এই শীর্ষ সম্মেলনের মাধ্যমে দেশের বিপিওশিল্পের চ্যালেঞ্জগুলি সনাক্ত করার, জাতীয়স্তরের নীতিমালা আরও উন্নত করার এবং এ শিল্পের জন্য একটি দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির সুযোগ হয়েছিল ত্বরান্বিত। এছাড়াও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপি-এর দূরদর্শী নেতৃত্বে ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাস্তবায়ন এবং বহির্বিশ্বে এ খাতের সক্ষমতা উপস্থাপনসহ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আগ্রহ সৃষ্টিতে সামিটগুলো পালন করেছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এ বছর সাতটি বিভাগে পর্যায়ক্রমে আলাদা আলাদাভাবে “বিভাগীয় বিপিও সামিট” উদযাপনের পর কেন্দ্রীয় পর্যায়ে চূড়ান্তভাবে আয়োজিত হবে “কেন্দ্রীয় বিপিও সামিট”। এ আয়োজনের মাধ্যমে আইসিটিশিল্প বিকাশে আইসিটিপণ্য ও সেবা প্রদর্শনী, বিপিওখাতের অর্জন/সাফল্য ও সম্ভাবনা উপস্থাপন, তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক সেমিনার ও কর্মশালা আয়োজন, ই-গভর্নেন্স, ই-কমার্স, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে দেশের অর্জিত সাফল্য বিশ্ববাসীসহ বাংলাদেশের জনগণের নিকট তুলে ধরা হবে।
বাংলাদেশের রপ্তানি-সম্ভাবনাময় খাতের ভেতর অন্যতম ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাত’, যাকে সরকারকর্তৃক ‘থ্রাস্ট সেক্টর (Thrust Sector)’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে; কেননা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে তোলার প্রসঙ্গে উক্ত ক্ষেত্রের রয়েছে অপার সম্ভাবনা! তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের অন্তর্ভুক্ত শিল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও)’, যা ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বাজারে সেবা রপ্তানির মাধ্যমে ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রাজস্ব আহরণকারী এক নিয়ত বর্ধনশীল শিল্পক্ষেত্র। বিপিও শিল্পে বর্তমানে কর্মরত জনসম্পদের সংখ্যা ৭০০০০+; যাদের মধ্যে ৪০ শতাংশই নারী। এ বিপিও/আউটসোর্সিং শিল্পের জন্য নিবেদিত একক ও কেন্দ্রীয় বাণিজ্য সংস্থার নাম ‘বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ কনট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো)’, যেটি ২০২৫ সালের মধ্যে বিপিও শিল্পখাতে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রাজস্ব আয় তৈরি ও বিপিওক্ষেত্রে ১ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের “স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১”-লক্ষ্য অর্জনে সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অসংখ্য প্রতিষ্ঠান ও অংশীজনদের সঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১’ বাস্তবায়নের বৃহত্তর লক্ষ্যকে সফল করা, দেশীয় বিপিওশিল্পের বিকাশের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী এই শিল্পের ব্যাপ্তি ঘটাতে ‘বিপিও সামিট বাংলাদেশ ২০২৩’ শীর্ষক আয়োজনের গুরুত্ব অপরিসীম। অন্যদিকে এ সামিটের ‘ক্যারিয়ার ক্যাম্পেইন’ দেশের বিপিও খাতে দক্ষ জনসম্পদ গড়ে তুলতে ও সম্ভাবনাময় তরুণ-তরুণীদের উপযুক্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অনস্বীকার্য ভূমিকা পালন করবে, এমনটাই বাক্কোর আশাবাদ।