‘এআই আমাদের ভূমিকাকে বাতিল করবে না; বরং আমাদের সক্ষমতা ও দক্ষতাকে আরও শক্তিশালী করবে এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের সৃষ্টিশীলতার পরিধি বিস্তৃতিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।” গতকাল (১১ নভেম্বর) দ্য ওয়েস্টিন ঢাকায় অনুষ্ঠিত পিয়ারসন এডেক্সেল আয়োজিত পিয়ারসন এডুকেশন অ্যানুয়াল সামিটে এ কথা বলেন হেইলিবেরি ভালুকার ফাউন্ডিং হেডমাস্টার সাইমন ও’গ্রেডি। সামিটে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকার সকল পিয়ারসন স্কুলের প্রধান ও অধ্যক্ষরা। সামিটে তারা শিক্ষাখাতের ভবিষ্যৎ দিক-নির্দেশনায় গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন।
‘পরিবর্তনশীল বিশ্বের জন্য শিক্ষায় উদ্ভাবন’ – এ বিষয় নিয়ে সামিটে বিশেষজ্ঞরা শিক্ষার ক্রমপরিবর্তনশীল পরিবেশ, শিক্ষার ওপর ডিজিটাইজেশনের প্রভাব, প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান ব্যবহার এবং বিশ্বজুড়ে স্কুলগুলোতে কী ধরনের সর্বোত্তম অনুশীলনী অনুসরণ করা হয়, এ বিষয়ে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেন। ক্রমপরিবর্তনশীল অবস্থায় শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা সামিটে আলোচনা করেন। সামিটে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত থেকে বক্তব্য প্রদান করেন পিয়ারসনের এমপ্লয়বিলিটি ও কোয়ালিফিকেশনের পরিচালক প্রেমিলা পলরাজ এবং ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের কান্ট্রি এক্সামস ডিরেক্টর ম্যাক্সিম রায়মান।
প্যানেল আলোচনায় সাইমন ও’গ্রেডি বলেন, “প্রচলিত শিক্ষার পদ্ধতিগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একটি বিস্তৃত পরিধি নিয়ে কাজ করে এবং শিক্ষার্থীদের সাধারণ দক্ষতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। কিন্তু ক্রমপরিবর্তনশীল সময়ের সাথে সাথে আমাদের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রে ব্যক্তিকেন্দ্রিককরণে (পারসোনালাইজেশন) গুরুত্ব দেয়া উচিত এবং তাদের আরও নির্দিষ্ট উপায়ে প্রশিক্ষণ দেয়া উচিত; পাশাপাশি, তাদের ব্যক্তিগত বিকাশ নিয়ে পরিকল্পনা করা প্রয়োজন।” তিনি থমাস কুনের বিশ্লেষণ – ‘দ্য স্ট্রাকচার অব সায়েন্টিফিক রেভুল্যুশনস’ এর ভিত্তিতে এআই, চাকরি, শিক্ষা ও গণতন্ত্রে এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি আরও বলেন, “শেখা, কর্মসংস্থান ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় পরিবর্তনের প্রতিনিধি হিসেবে মেশিনের সাথে আমাদের সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে এআই উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। এআই শিশুদের সম্ভাবনা সম্পর্কে আমাদের বোঝার সুযোগ করে দিয়েছে; আমরা অল্পবয়স থেকে তাদের সম্পর্কে জানতে পারছি এবং সে অনুযায়ী আমরা তাদের সম্ভাবনা ও সৃষ্টিশীলতা বিকাশে উৎসাহ দিতে পারবো, যাতে আমাদের বাচ্চারা তাদের পছন্দের কাজের ক্ষেত্রে উৎকর্ষ অর্জন করে।”
সামিটে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিয়ারসন ইউকে’র পিয়ারসন স্কুল কোয়ালিফিকেশনসের ডিরেক্টর ডেভিড অ্যালবন। তিনিও শিক্ষাক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, “পরিবর্তনশীল বিশ্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থাকে ত্বরান্বিত করছে ডিজিটাল প্রযুক্তি। ডিজিটাল প্রযুক্তি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে বিকাশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এক্ষেত্রে, অটোমেশনের অপব্যবহারেরও ঝুঁকি থাকবে, বিশেষত যেসব অঞ্চলে শিক্ষাবিদ ও প্রশিক্ষকরা নিজেরাই এখনও প্রয়োজনীয় ডিজিটাল দক্ষতা অর্জন করতে পারেননি। বিশ্বজুড়েই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এ অপব্যবহার হ্রাসে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে ভূমিকা রাখার দাবি জানিয়েছে। ঝুঁকির এ প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে এআই-ভিত্তিক টুল ব্যবহারের ক্ষেত্রে শিক্ষাখাত সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।”
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেনো প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ প্রবণতাগুলোর সাথে মানিয়ে নিতে পারে, এজন্য অনুষ্ঠানে সামগ্রিকভাবে উন্নত নেটওয়ার্ক ও অবকাঠামোর প্রয়োজনীয়তার ওপর আলোকপাত করা হয়। ভবিষ্যৎ উপযোগী দক্ষতা যেমন সৃষ্টিশীলতা, কার্যকরী উপায়ে চিন্তা করার দক্ষতা (ক্রিটিক্যাল থিংকিং) ও ভবিষ্যতের নেতৃবৃন্দের মধ্যে সহযোগিতার মানসিকতা গড়ে তুলতে শিক্ষকদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাসহ শীর্ষ পর্যায়ে প্রস্তুতি নেয়া, প্রযুক্তির অপব্যবহারের ঝুঁকি হ্রাসে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং স্কুলগুলো কীভাবে কার্যকরী উপায়ে এআইসহ ডিজিটাল প্রযুক্তির অন্যান্য টুল ব্যবহার করতে পারে, এ বিষয়েও সামিটে আলোচনা করেন বক্তারা। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা সময়োপযোগী এমন উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য পিয়ারসন এডেক্সেলকে ধন্যবাদ জানান এবং এক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য হেইলিবেরি ভালুকাসহ অন্যান্য ভবিষ্যৎ-কেন্দ্রিক স্কুল যারা ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হওয়ার যাত্রাকে ত্বরান্বিত করছে, তাদের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান।