Saturday, April 20, 2024
spot_img
Homeবিশেষ প্রতিবেদনবেসিসের সাবেক সভাপতি আলমাসের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ

বেসিসের সাবেক সভাপতি আলমাসের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ

বাংলাদেশের বৃহত্তম ইন্টারনেট ভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান মেট্রোনেট বাংলাদেশ লিমিটেড বন্ধের গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। মেট্রোনেটের সেবা বন্ধ হলে হুমকির মুখে পড়তে পারে সারাদেশের ইন্টারনেট সেবা। মেট্রোনেটের মাত্র ২ শতাংশ মালিক ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবিরের বিরুদ্ধে নিয়মনীতি ভঙ্গ করে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে দেশের জরুরি তথ্যসেবা ৯৯৯, সকল ব্যাংক, মোবাইল ফিন্যান্স সার্ভিস বিকাশ, নগদ, চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জ, জাতীয় পরিচয়পত্র অনুসন্ধান সেবা, ই-পাসপোর্টসহ রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি বহু প্রতিষ্ঠানের ইন্টারনেট ভিত্তিক সেবা বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন মেট্রোনেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফা রফিকুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফেরদৌস আজম খান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুল আলম, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট রাহাত খান প্রমুখ। মেট্রোনেটের শেয়ারের হোল্ডার প্রতিষ্ঠান রহিম আফরোজ ও সৈয়দ আলমাস কবির যোগসাজশে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে মেট্রোনেট থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকা এবং ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে প্রায় ৮ কোটি টাকা শেয়ার ক্রয়ের নামে সরিয়ে নিয়েছে। অবৈধভাবে কোম্পানির ব্যাংক একাউন্ট থেকে মোট প্রায় ১১ কোটি টাকা তুলে নেওয়াতে শিগগির তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান মোস্তাফা রফিকুল ইসলাম। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বরের পর হতে বর্তমান বোর্ড কোম্পানির দৈনন্দিন কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় সৈয়দ আলমাস কবির ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ৮ ডিসেম্বর হতে বিভিন্ন ব্যাংকে লেনদেন বন্ধের জন্য বেআইনিভাবে চিঠি প্রদান করে চলেছেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন ব্যাংকসহ গ্রাহকদের বিল পরিশোধ না করার জন্য চিঠি প্রদান করেন।

কোম্পানি বিরোধী কার্যকলাপের কারণে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও পদধারী সৈয়দ আলমাস করিবকে প্রথমে সিইও পদ হতে অ্যাডভাইজার পদে এবং পরবর্তীতে তার এই কোম্পানির বিপক্ষে অসাধু কার্যকলাপ এবং ধারাবাহিকভাবে ৩টির অধিক বোর্ড মিটিংয়ে অনুপস্থিত থাকার কারণে তাকে পরিচালক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক উভয় পদ হতে অব্যাহতি দেয়া হয়। তিনি বলেন, রহিম আফরোজ গ্রুপ ২০১৯ সালে তাদের সম্পূর্ণ শেয়ার বিক্রি করে মেট্রোনেট থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের সাথে ফ্লোরা টেলিকম, ফেরদৌস আজম খানও শেয়ার বিক্রি করে বেড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। শেয়ার বিক্রির জন্য কাঙ্ক্ষিত গ্রাহক না পাওয়ায় মেট্রোনেটে অপারেশনে থাকা কর্মকর্তাদের শেয়ার ক্রয়ের প্রস্তাব করে। কিন্তু আলমাস কবির একাই মালিক হওয়ার উদ্দেশ্যে বাকি তিন কর্মকর্তার সঙ্গে প্রতারণা করে রহিম আফরোজ গ্রুপ, ফ্লোরা টেলিকম এবং মেট্রোনেটের প্রতিষ্ঠাতা ফেরদৌস আজম খানের সম্পূর্ণ শেয়ার নিজ নামে ক্রয়ের উদ্দেশ্যে ২০২২ সালের জুন মাসে প্রত্যেকের সঙ্গে আলাদাভাবে শেয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট (এসপিএ) স্বাক্ষর করেন। কোম্পানির প্রায় ৯৮% শেয়ারের মালিক হওয়ার কু-চক্রান্ত করেন। শেয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী টাকা পাওয়ার জন্য অনুরোধ করতে থাকি।যেখানে ২ মাসে অর্থ পরিশোধের চুক্তি ছিল সেখানে প্রায় ৬ মাস অতিবাহিত হয়ে যায়, এক পর্যায়ে সৈয়দ আলমাস আমাদের ফোন এবং ইমেইল যোগাযোগের উত্তর দেওয়া বন্ধ করে দেন।

অনেক গরি মশির পর ৫ ডিসেম্বর একটি বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং ফ্লোরা টেলিকম লিমিটেডের মনোনীত পরিচালক হিসেবে আমি মোস্তাফা রফিকুল ইসলাম ও ফারাহ ইসলাম এবং স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে ফেরদৌস আজম খান অনুমোদন পাই। সে অনুযায়ী, আমরা আরজেএসসিতে নথি জমা দিয়ে অনুমোদন নিয়ে মেট্রোনেট বাংলাদেশ লিমিটেডের নতুন বোর্ড গঠন করি। মোস্তাফা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের বোর্ড যখন সুষ্ঠুভাবে দৈনন্দিন কর্ম পরিচালনা করছিল তার মাস খানেক পর রহিম আফরোজ গ্রুপও বোর্ডে প্রবেশ করার জন্য আদালতে গেলে ২৩০০ কোটি টাকার অধিক ঋণ খেলাপি হিসেবে তাদের আবেদন নাকচ করে দেন, পরবর্তীতে তারা উচ্চতর আদালতে এসে প্রথমে বোর্ডের বিপক্ষে ইনজাংশন চেয়ে নেন। ইনজাংশন পাওয়ার পর বোর্ড মাননীয় সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেড ডিভিশন হতে আবেদন করে ওই ইনজাংশনের বিপক্ষে  স্টাটার্স-কো অর্ডার অর্জন করে দৈনন্দিন কার্যক্রম চালাচ্ছে। এই অবস্থায় রহিম আফরোজ গ্রুপ এবং আলমাস কবির অফিসে প্রবেশ করে আদালত অবমাননা করছে। তিনি এখনও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও পদ ব্যবহার করে কোম্পানির এবং বোর্ডের বিপক্ষে ভাড়াটে ও বহিষ্কৃত কিছু কর্মকর্তাদের নিয়ে বেআইনি কার্যকলাপ চালাচ্ছেন। মাননীয় সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেড ডিভিশনের স্টাটার্স-কো অর্ডারের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক এবং কাস্টমারদেরকে বিভ্রান্ত করছেন, গুলশান-২ রেজিস্টার্ড অফিসের ইন্টারনেট সংযোগ, ফোন ও পিএবিএক্স সংযোগ, ইমেইল, ইআরপি, বিভিন্ন সার্ভারসহ নেটওয়ার্ক এক্সেস সার্ভিস পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে দিয়েছে এবং আমাদের বিল কালেকশন টিমের ই-মেইল, ফোন এক্সটেনশন ক্লোন করে বনানী অফিসে নিজস্ব লোক দিয়ে বেআইনিভাবে মানি রশিদ প্রিন্ট করে বিল আদায় করছে। এসব বিষয়ে থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগে আইএল কর্প লিমিটেড নামক একটি কাগুজে কোম্পানি দিয়ে মেট্রোনেট বাংলাদেশ লিমিটেডকে গ্যারান্টর করে মেঘনা ব্যাংক থেকে শতকোটি টাকার ঋণ নেয়ার প্রচেষ্টা চালায় সৈয়দ আলমাস কবির, যার সংবাদ একটি অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় বলে জানান তিনি।

spot_img
আরও পড়ুন
- Advertisment -spot_img

সর্বাাধিক পঠিত

spot_img