বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া বিজনেস কাউন্সিল (বিআইবিসি)’র যৌথ উদ্যোগে ঢাকার হোটেল রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে শুরু হল দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক নারী উদ্যোক্তা সম্মেলন ২০২২। নানা রকম আয়োজনের মধ্য দিয়ে ২৩ ও ২৪ নভেম্বর প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই আন্তর্জাতিক উদ্যোক্তা সম্মেলন। এরই আলোকে ২৩ নভেম্বর বুধবার উক্ত সম্মেলনের প্রথমদিনে “আইসিটি- স্মার্ট বাংলাদেশ দি নেক্সট ফ্রন্টিয়ার” শীর্ষক একটি প্যানেল সেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী সারা বিশ্বে নারীর ক্ষমতায়ন এবং সমাজে নারীর ভূমিকা তুলে ধরেন। তিনি বর্তমান সমাজে নারীর অবদান সম্পর্কে আলোকপাত করেন। প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন যে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক এবং অর্থনীতিবিদ হলেন “মা”। তিনি তাঁর ছেলেবেলার কথা উল্লেখ করে বলেন যে তিনি নিজেও মাতৃতান্ত্রিক পরিবারে বড় হয়েছেন। তাঁর মা যেমন পরিবারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন, বর্তমানে তাঁর স্ত্রী পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তিনি আরো বলেন যে পরিবারে নারীর ভূমিকা অপরিসীম। আমাদের উচিত অফিস আদালত কর্মক্ষেত্র সকল স্থানে নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া এবং তাদের সম্মান দেওয়া।
প্রতিমন্ত্রী তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে নারীর অংশগ্রহণ এবং সফলতা সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি বলেন যে নারীর ক্ষমতায়ন অর্থনৈতিক উন্নয়ন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সামাজিক পরিবর্তনের অন্যতম চাবিকাঠি। তিনি নারী উদ্যোক্তাদের অনুপ্রাণিত করে বলেন আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো ঝুঁকি নেওয়ার সাহস। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মেধাবী, সাশ্রয়ী, প্রগতিশীল তিনিই একজন স্মার্ট ব্যক্তি।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নারীর ক্ষমতায়নের জন্য আর্থিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছেন সে বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী পলক আলোকপাত করেন। প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন যে শি পাওয়ার প্রকল্পের মাধ্যমে ২১টি জেলায় ১০ হাজার ৫০০ নারী উদ্যোক্তা তৈরি করা হয়েছে। লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের অধীনে প্রায় ২ লাখ নারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলেও প্রতিমন্ত্রী জানান।
প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন যে উদ্যোক্তাদের জন্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আইডিয়া প্রকল্পের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ৩৪৫টি উদ্যোক্তাকে ১০ লক্ষ টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কো-ওয়ার্কিং স্পেস, মেন্টরিং, প্রশিক্ষণ, লিগ্যাল সাপোর্টসহ নানা প্রকার সুবিধা স্টার্টআপদের জন্যে প্রদান করা হচ্ছে।অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী “নিত্য এক্সপ্রেস” নামে একজন প্রান্তিক নারী উদ্যোক্তার উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে পেরে তার মেধা, ধৈর্য্য, সততা এবং শ্রম উপলব্ধি করে আইডিয়া প্রকল্প থেকে অনুদান প্রদানের আশ্বাস দেন।
সবশেষে, প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশে এরকম একটি চমৎকার সম্মেলন আয়োজনের জন্য আয়োজক কর্তৃপক্ষকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।উক্ত সেশনটিতে আলোচনায় অংশ নেন বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ, ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার, নগদ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক, ওরাকল বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবাবা দৌলা মতিন, চালডাল লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ওয়াসিম আলীম, ডুন অ্যান্ড ব্র্যাডস্ট্রিট ডেটা অ্যান্ড অ্যানালাইসিস প্রাইভেট লিমিটেডের সিইও জারা মাহবুব, বাককো জেনারেল সেক্রেটারি তৌহিদ হোসেন এবং কওনবে সেন্ট্রাল হংকং এর সিওও এনিনা হো।
উল্লেখ্য, উক্ত সামিটে বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি, সুপরিচিত উদ্যোক্তা ও কর্পোরেট লিডাররা অংশগ্রহণ করছেন। ইন্টারন্যাশনাল উইমেন এন্টারপ্রেনারস সামিট ২০২২ ব্যবসায়ী নারী এবং উদ্যোক্তাদের জন্য বিশ্বের অন্যান্যদের সাথে নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ বাড়াতে, তাদের থেকে শিক্ষাগ্রহণসহ সহযোগিতার সুযোগ তৈরি করতে একটি চমৎকার আয়োজন। বাংলাদেশের স্থানীয় উদ্যোক্তা এবং নারী নেতৃবৃন্দকে বৈশ্বিক ব্যবসায়ী কমিউনিটির কাছে তুলে ধরতে সাহায্য করার জন্য এটি একটি অসাধারণ প্ল্যাটফর্ম। এ সম্মেলনের দেশের নারীপ্রধান ব্যবসা খাতে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন আয়োজক কর্তৃপক্ষ।