দেশের প্রান্তিক অঞ্চলে ই-কমার্স সেবা পৌঁছে দিয়ে গ্রাম ও শহরের দূরত্ব কমিয়ে আনার স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পুরস্কার ‘এসডিজি ডিজিটাল গেম চেঞ্জার অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করলো এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই)-এর উদ্ভাবনী উদ্যোগ একশপ। জাতিসংঘের দুই সংস্থা জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এবং আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) যৌথভাবে ‘গেম চেঞ্জার ফর প্রসপারিটি’ ক্যাটাগরিতে এটুআই এর উদ্যোগ ‘একশপ’কে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে পুরস্কার প্রদান করে।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩) এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজর জনাব আনীর চৌধুরী, এটুআই-এর হেড অব কমার্শিয়াল স্ট্রেটেজি জনাব রেজওয়ানুল হক জামি এবং এটুআই-এর প্রোগ্রাম এসোসিয়েট (আউটরীচ অ্যান্ড রিসোর্স মোবিলাইজেশন) জনাব মোঃ শাহরিয়ার হাসান অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে এ মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক পুরস্কারটি গ্রহণ করেন।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সফলতার স্বীকৃতিস্বরূপ প্রথমবার এই পুরস্কার প্রদান করছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের দুই সংস্থা জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী (ইউএনডিপি) এবং আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) যৌথভাবে এবছর পুরস্কারটি চালু করে। সারাবিশ্বের ৯০ দেশের ৪৫০টিরও বেশি ডিজিটাল উদ্যোগ থেকে ‘গেম চেঞ্জার ফর প্রসপারিটি’ ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয় একশপ প্ল্যাটফর্ম। এবার প্রসপারিটিসহ পিপল, প্লানেট, পিস ও পাইওনিয়ার এই ৫ ক্যাটাগরিতে ৫টি ডিজিটাল উদ্যোগকে পুরস্কৃত করা হয়।
একশপ দেশের সব বড় বড় ই-কমার্স কোম্পানি এবং হাজারও ছোট, মাঝারি উদ্যোক্তাকে নিয়ে তৈরি একটি সরকারি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম। এতে করে গ্রামের জনগণ প্রযুক্তি সহায়তায় খুব সহজেই ডিজিটাল মার্কেটের সাথে যুক্ত হতে পারছে। একশপ জনগণের দোরগোড়ায় পণ্য পৌঁছে দেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে আসছে। দেশের গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে গ্রামীণ পর্যায়ের বাণিজ্যকে ই-কমার্সে অন্তর্ভুক্ত করার মধ্য দিয়ে গ্রাম ও শহরের যে ডিজিটাল বৈষম্য তা কমাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে একশপ। এই আন্তর্জাতিক পুরস্কার বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের অনুন্নত দেশগুলোকে ডিজিটাল বৈষম্য কমিয়ে আনার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করবে। একটি বৈষম্যহীন ডিজিটাল ব্যবস্থা গঠনে সময়োপযোগী ডিজিটাল সল্যুশনের মধ্য দিয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এটুআই সবসময় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
এটুআই-এর ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ‘একশপ’ দেশের প্রান্তিক অঞ্চলে ই-কমার্স সেবা পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি প্রান্তিক মানুষের পণ্য সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই ২০১৯ সালে এর যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে ১২ হাজারেরও অধিক গ্রামীণ কারিগর একশপের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় করছে। ইতোমধ্যে একশপ ৮০ লক্ষেরও অধিক পণ্য ক্যাশ অন ডেলিভারির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে। কোনো বিক্রেতা তাঁর পণ্য বিক্রি করতে চাইলে নিজেই একশপে যুক্ত হতে পারেন। আবার একশপে যুক্ত কোনো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানেও তাঁর পণ্য বিক্রির জন্য প্রদর্শন করতে পারেন। এ কাজটি বিক্রেতা নিজেই করতে পারেন। আবার এক্ষেত্রে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের সহায়তা নিতে পারেন।
এছাড়া, একশপের ডেলিভারি ব্যবস্থাপনা রয়েছে। করোনাকালে এই সেবা চালু হয়। যেকোনো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বা উদ্যোক্তা এই সেবার মাধ্যমে নিজেদের পণ্য গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন। এই প্ল্যাটফর্মে দেশের বিভিন্ন পণ্য ডেলিভারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে যুক্ত করা হয়েছে। সরকারি বিভিন্ন উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানকেও একশপের ছাতার নিচে আনা হয়েছে।
একশপ এর মডেল শুধু দেশেই না অনুন্নত দেশগুলোতে এর রেপ্লিকার মধ্য দিয়ে ডিজিটাল বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ সুদান, ইয়েমেন, তুরস্ক ও সোমালিয়াতে ডিজিটাল বৈষম্য কমাতে একশপের মডেল রেপ্লিকা করা হচ্ছে। পাশাপাশি ফিলিপাইনের একটি প্রদেশেও এই মডেল চালু হয়েছে। দেশের বাইরে এই মডেল চালুতে জাতিসংঘ সহায়তা করছে।
উল্লেখ্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতাধীন ও ইউএনডিপির সহায়তায় পরিচালিত এটুআই প্রোগ্রাম স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে নাগরিক সেবা সহজীকরণে কাজ করে যাচ্ছে।