প্রযুক্তি মানুষকে স্মার্ট করে তবে স্মার্ট হওয়ার জন্য প্রযুক্তি একমাত্র মাধ্যম নয়। প্রযুক্তিতে দক্ষ হওয়ার পাশাপাশি নৈতিক গুণাবলী অর্জন করতে হবে। মানুষ মানবিক, দক্ষ এবং প্রযুক্তি বান্ধব হলেই স্মার্ট সিটিজেন হিসেবে নিজেকে দাবি করতে পারবে। প্রযুক্তি প্রদর্শনী স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অন্যতম সহায়ক। আমি বিশ্বাস করি স্মার্ট বাংলাদেশ টেক এক্সপো ২০২৩ চট্টগ্রাম শিক্ষার্থী এবং তরুণদের প্রযুক্তি প্রেমী হিসেবে গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখবে।
১৪ জুন বুধবার চট্টগ্রাম জিইসি কনভেনশন সেন্টারে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) চট্টগ্রাম শাখা আয়োজিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টেক এক্সপো ২০২৩ চট্টগ্রাম’ উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী (নওফেল), এম,পি।
তিনি আরো বলেন, মানবিক গুণাবলী অর্জন করতে না পারলে কোন কিছুই সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। নিত্যনতুন প্রযুক্তি এবং হালনাগাদ ডিভাইসের সাথে মানুষের সখ্যতা গড়ে তুলতে হবে। যে কাজ ১০ জন মানুষকে দিয়ে হতো ভবিষ্যতে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা এবং রোবোটিক্সকে কাজে লাগিয়ে সে কাজ করার জন্য একজন মানুষ যথেষ্ট হবে। তাই বলে দক্ষ মানুষের কর্মক্ষেত্র সংকীর্ণ হবে না। যোগ্য মানুষদের জন্যই পৃথিবী। মানুষের প্রয়োজনেই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হবে। আমাদের যুব সমাজরা প্রযুক্তির সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করে পৃথিবীকে নেতৃত্ব দেয়ার গুণাবলীতে নিজেদের গুণান্বিত করতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
নওফেল বলেন, তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সুশাসন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, কার্যকর গণতন্ত্র, জনগণের ক্ষমতায়ন ও সাফল্যের প্রতিচ্ছবি আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশে দেখতে পেয়েছি। প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার শিখতে হবে। কোন অপপ্রচারে অংশ নেয়া যাবে না। দক্ষতা অর্জন, নতুন প্রযুক্তির প্রতি মনোনিবেশ,সংকীর্ণতাকে অতিক্রম করে সমৃদ্ধ করার প্রচেষ্টাই হচ্ছে নিজেকে স্মার্ট হিসেবে গড়ে তোলা মূলমন্ত্র। এই এক্সপোর মাধ্যমে প্রযুক্তিপণ্য কেনার পাশাপাশি উদ্ভাবনকে গুরুত্ব দিয়ে ইনোভেশন জোন করা হয়েছে। আবিষ্কারের নেশা মানুষের কাজের আগ্রহকে বৃদ্ধি করে। তাই প্রযুক্তিপণ্য দেখে নিজেরাই যেন এসব পণ্য তৈরীর কৌশল সম্পর্কে ধারণা অর্জন করতে পারেন এমন আগ্রহ নিয়ে এক্সপোতে শিক্ষার্থী এবং যুবসমাজরা বেশি বেশি অংশগ্রহণ করবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম। তিনি বলেন, ২০২৬ সালের মধ্যে দেশের অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন আসবে। চাকরী করার চেয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য নিজেদের জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। আর এই দক্ষতা আসবে তখন যখন শিক্ষার্থী এবং যুব সমাজ প্রযুক্তি বান্ধব হবে। আমাদের শিক্ষা নীতিতে প্রযুক্তির প্রতি গুরুত্ব বাড়ানো হয়েছে। আইসিটি খাতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ফ্রি-ল্যান্সাররা বাসায় বসে আউটসোর্সিং করতে পারছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশের পর স্মার্ট বাংলাদেশের সুফলও আমরা নিঃসন্দেহে উপভোগ করতে পারবো।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিসিএস সভাপতি ইঞ্জি. সুব্রত সরকার। তিনি বলেন, ফোরআইআরকে গুরুত্ব দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের পিলারগুলোকে নির্মাণ করা গেলে ভবিষ্যৎ সমস্যাগুলোর সমাধান সহজ হবে। বিসিএস নিত্যনতুন প্রযুক্তির সঙ্গে দেশের মানুষকে পরিচয় করিয়ে দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। সে লক্ষে ১০টি শাখা এবং সাড়ে তিন হাজারের বেশি সদস্য নিয়ে আমরা আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশ হবে সারা পৃথিবীর কাছে স্মার্ট দেশের অন্যতম রোল মডেল।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে বিসিএস সহ-সভাপতি এবং প্রদর্শনীর কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী মো. রাশেদ আলী ভূইয়া বলেন, দেশের তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনে যে সংগঠনটির নাম সবার শীর্ষে সেই সংগঠনটি হলো বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি বা বিসিএস। প্রতিষ্ঠার ৩ যুগ পেরিয়ে এই সংগঠনের সাফল্যও ঈর্ষণীয়। কম্পিউটারের ক্রয়মূল্যকে হাতের নাগালে এনে প্রযুক্তি খাতকে অগ্রগতির মহাসড়কে পৌঁছে দিতে যে আন্দোলন বিসিএস শুরু করেছিল সে আন্দোলনের সফল গন্তব্য আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশ। বিসিএস এর উচ্চারণ করা ডিজিটাল বাংলাদেশ শব্দটি এখন আমাদের ট্রেডমার্ক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রযুক্তিখাতকে এগিয়ে নিতে বরাবর আন্তরিক। এরই ধারাবাহিকতায় ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখে। জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে আমরাও বিশ্বাস করি ‘রুপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নের আগেই আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ এ রুপান্তর হবো।
স্বাগত বক্তব্যে বিসিএস চট্টগ্রাম শাখার চেয়ারম্যান এবং প্রদর্শনীর আহ্বায়ক মো. দিদারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, স্মার্ট সোসাইটি তৈরি করতে স্মার্ট পিপল বা সিটিজেনের বিকল্প নেই। বাংলাদেশের মানুষকে স্মার্ট করতে মূলত সব আয়োজন। আজ থেকে ২০ বছর আগেও আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রোগ্রাম লাইভ দেখার কথা চিন্তা করতে পারতাম না। আজ আমাদের প্রত্যেকের হাতে হাতে স্মার্টফোন আর স্মার্ট ডিভাইস। এই ডিভাইসগুলোর মাধ্যমে আমরা সারা পৃথিবীর সাথে সংযুক্ত। পৃথিবী আজ বিশ্বায়নের গ্রামে পরিণত হয়েছে। আর এই সফলতার একক কৃতিত্ব ডিজিটাল ডিভাইস তথ্য প্রযুক্তিপণ্যের।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন স্পন্সর প্রতিষ্ঠান স্মার্ট টেকনোলজিস বিডি লিমিটেডের পরিচালক এবং বিসিএস এর প্রাক্তন যুগ্ম মহাসচিব মো. মুজাহিদ আল বেরুনী সুজন, বিসিএস চট্টগ্রাম শাখার সেক্রেটারি সুমন চৌধুরী, প্রাক্তন চেয়ারম্যান মো. সুফিয়ান আলী, স্পন্সর প্রতিষ্ঠান সিডনিসান ইন্টারন্যাশনালের সিইও সাগর টিটো প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইসিটি বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফয়সাল খান। প্রদর্শনীর সহযোগী আইসিটি বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (আইবিপিসি)। প্লাটিনাম স্পন্সর আইমো-সিডনিসান। গোল্ড স্পন্সর ডিডিএন, গ্লোবাল ব্র্যান্ড প্রাইভেট লিমিটেড, এমএসআই এবং স্মার্ট টেকনোলজিস বিডি লিমিটেড। সিলভার স্পন্সর এসার, কম্পিউটার সল্যিউশন ইনক, টিপি লিঙ্ক-এক্সেল, স্কাই ভিউ, গোল্ডেন ট্রেন ইন্টারন্যাশনাল বিডি, ভিউসনিক, অরিয়েন্ট বিডি লিমিটেড, প্যানটাম, টেন্ডা-সাউথ বাংলা কম্পিউটার্স এবং ভিভাঙ্কো ভেরিকম। গেমিং পার্টনার ইউসিসি। নিরাপত্তা সহযোগী ডাহুয়া-সিডনি সান। যোগাযোগ সহযোগী ডিডিএন।
স্মার্ট বাংলাদেশ টেক এক্সপো ২০২৩ চট্টগ্রাম এর প্রবেশ মূল্য ১০ টাকা। স্কুল শিক্ষার্থী এবং সংবাদকর্মীদের জন্য বিনামূল্যে প্রবেশের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়াও রোটারেক্ট, রোটারি, লিও এবং লায়ন্স ক্লাবের সদস্যদের পাশাপাশি সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সারদের জন্যও প্রদর্শনীতে বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ থাকছে। সকাল ১০ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত এই প্রদর্শনী চালু থাকবে। মেলায় দর্শনার্থীরা বিনামূল্যে ওয়াইফাই ব্যবহার করতে পারবেন। তিন দিনব্যাপী এই মেলা শেষ হচ্ছে আগামীকাল।