Home ইভেন্ট এপিক্টা ২০২৫-এ বাংলাদেশের দৃঢ় পদচারণা

এপিক্টা ২০২৫-এ বাংলাদেশের দৃঢ় পদচারণা

এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি খাতের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আয়োজন এশিয়া প্যাসিফিক আইসিটি অ্যালায়েন্স অ্যাওয়ার্ডস (এপিক্টা) ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয় ৮ ডিসেম্বর তাইওয়ানের কাওশিউং শহরে। এই আন্তর্জাতিক আসরে বাংলাদেশ আবারও তার উদ্ভাবনী সক্ষমতা ও প্রযুক্তিগত অগ্রযাত্রার শক্ত অবস্থান প্রমাণ করেছে। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ, স্বীকৃতি ও পুরস্কার আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের আইসিটি খাতের ধারাবাহিক উন্নয়নকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে। ইক্সোরা সলিউশনস লিমিটেডের ‘ন্যায্যমূল্য ’ এবং রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী প্রকল্প ‘সেফস্টেপ (SAFESTEP)’ নিজ নিজ বিভাগে দ্বিতীয় রানার-আপ অর্জন করেছে, পাশাপাশি মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি-এর শিক্ষার্থীদের প্রকল্প ‘রাডসেফ (Radsafe)’ মেরিট অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে বাংলাদেশের উদ্ভাবনী শক্তিকে আরও সুদৃঢ় করেছে।

স্টার্টআপ পর্যায়েও এসেছে উল্লেখযোগ্য সাফল্য। মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি -এর শিক্ষার্থী ও Automated MTBM-এর প্রতিষ্ঠাতা ফাতিমা আশরাফ তাইওয়ানের ন্যাশনাল ইয়াং মিং চিয়াও তুং ইউনিভার্সিটি আয়োজিত মেগা ডে স্টার্টআপ পিচ-এ অংশ নিয়ে সিলভার প্রাইজ এবং ৫,০০০ মার্কিন ডলার পুরস্কার অর্জন করেন, যা বাংলাদেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। শিক্ষার্থী পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় এপিক্টা ২০২৫-এর কোড জাজ’র ওয়ার্কশপ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মেহরান ইসলাম মাহিম এবং প্রথম রানার-আপ হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থী মুনেম শাহরিয়ার ইসলাম সামন্ত।

২০২৫ সালে বাংলাদেশ থেকে মোট ২০টি প্রকল্প এবং ৪৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল এপিক্টা-তে অংশগ্রহণ করে। এবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বি এম মাইনুল হোসেন এবং আয়আল কর্প লিমিটেডের চেয়ারম্যান জয়া কবীর বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ আইসিটি অ্যান্ড ইনোভেশন নেটওয়ার্ক (বিন) সেক্রেটারিয়েট থেকে তানজিন প্রীতি প্রতিনিধিত্ব করেন এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্টার্টআপ ও শিল্পখাতের প্রতিযোগীরা এই আন্তর্জাতিক আসরে অংশ নেন।

পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে তাইওয়ানের ভাইস প্রেসিডেন্ট শাও বি-খিম বলেন, এপিক্টা একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম, যা উদ্ভাবন, অংশীদারিত্ব এবং ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি উন্নয়নে সহযোগিতা জোরদার করে। তাইওয়ানের অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী শেন জং-চিন বলেন, এবারের ক্যাটাগরিগুলো বৈশ্বিক স্মার্ট প্রযুক্তির প্রবণতাকে প্রতিফলিত করে এবং অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর জন্য দ্রুত বর্ধনশীল বাজারে প্রবেশের সুযোগ তৈরি করে।

বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতা ও এপিক্টা এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, এপিক্টা-তে নিয়মিত অংশগ্রহণ বাংলাদেশের জন্য শুধু পুরস্কারের বিষয় নয়, বরং বৈশ্বিক মানদণ্ডে নিজেদের সক্ষমতা মূল্যায়নের একটি কার্যকর মাধ্যম। উল্লেখ্য, সৈয়দ আলমাস কবীর ২০১৭ সাল থেকে এপিক্টার বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এপিক্টা’র ইকোনমিক কো-অর্ডিনেটর মুন এম রাজীব বলেন, বাংলাদেশ এখন আর কেবল অংশগ্রহণকারী নয়, বরং একটি আত্মবিশ্বাসী ও প্রতিযোগিতামূলক উদ্ভাবনী শক্তি হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাচ্ছে।
২০০১ সালে যাত্রা শুরু করা এপিক্টা-কে আইসিটি খাতের ‘অস্কার’ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং এবারের অর্জনগুলো প্রমাণ করে, বাংলাদেশের প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম, স্টার্টআপ উদ্যোগ এবং তরুণদের সক্ষমতা বৈশ্বিক প্রযুক্তি অঙ্গনে ক্রমেই আরও দৃশ্যমান ও প্রভাবশালী হয়ে উঠছে।

Exit mobile version