দেশের বেকারত্ব সমস্যার সমাধানে স্মার্ট কর্মসংস্থান ইকোসিস্টেম তৈরিতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় এআই-রোবটিক্সসহ বিশ্বের সময়োপযোগী আধুনিক প্রযুক্তির বিষয়ে দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে একসাথে কাজ করবে এসপায়ার টু ইনোভেট-এটুআই এবং নেটকম লার্নিং গ্লোবাল লিমিটেড। এলক্ষ্যে গতকাল রোববার (০৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁও-এর আইসিটি টাওয়ারে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব) মোঃ মামুনুর রশীদ ভূঞা এবং নেটকম লার্নিং গ্লোবাল-এর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুন সরদার (রাসেল সরদার) নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ-এর সচিব মোঃ সামসুল আরেফিন।
এই সমঝোতা স্বারকের আওতায় দেশের চাকরি প্রত্যাশীদের সময়োপযোগী কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধিতে এটুআই-এর ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ‘মুক্তপাঠ’ (muktopaath.gov.bd) এবং দক্ষতা ও কর্মসংস্থান বিষয়ক ম্যাচমেকিং প্ল্যাটফর্ম ‘নাইস’ (nise.gov.bd) একত্রে নেটকম লার্নিং গ্লোবাল লিমিটেডের সাথে সমন্বয় করবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-রোবটিক্স চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের আধুনিক প্রযুক্তির বিষেয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশের চাকরি প্রত্যাশীদের দক্ষতা উন্নয়ন ও জব মার্কেটে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি ও বৃদ্ধিতে কাজ করবে সংশ্লিষ্ট দুই প্রতিষ্ঠান।
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কর্মোপযোগী শিক্ষা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে সরকার বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ-এর সচিব মোঃ সামসুল আরেফিন। তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে দেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য স্মার্ট পরিবেশ তৈরিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। আমাদের দেশে ব্লু-কলার জবে জনগণের দক্ষতা ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। ভবিষ্যতের লক্ষ্যে আমরা এখন হোয়াইট-কলার জবে দক্ষতা বাড়াতে চাই। এতে, দেশের বিপুল সংখ্যক শিক্ষিত জনগোষ্ঠী স্মার্ট নাগরিক হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি দক্ষতায় বিকশিত হবে, যা স্থানীয় এবং বৈশ্বিক শ্রমবাজারে অন্তর্ভুক্তিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব) মোঃ মামুনুর রশীদ ভূঞা বলেন, আজকের সমঝোতার মাধ্যমে দেশের চাকরি প্রত্যাশীরা বাংলায় সর্ববৃহৎ ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ‘মুক্তপাঠ’-এ আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে কোর্স শিখতে পারবেন এবং প্রশিক্ষণের পাশাপাশি চাকরির বাজারে রিয়েল টাইম সাপ্লাই ডিমান্ড ম্যাচমেকিং প্ল্যাটফর্ম ‘নাইস’-এর মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন। এর মাধ্যমে এটুআই-নেটকমের যৌথ প্রত্যয়নের ফলে চাকরি প্রত্যাশীরা বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ শতাধিক টেক কোম্পানি, যেমন মাইক্রোসফট, গুগল, আমাজন এই প্রতিষ্ঠানসমূহে হোয়াইট কলার জব প্রত্যাশায় পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সাথে প্রতিযোগিতামূলক চাকরিতে আবেদন করার সুযোগ পাবেন।
নেটকম লার্নিং গ্লোবাল-এর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুন সরদার (রাসেল সরদার) বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক স্বনামধন্য লার্নিং প্ল্যাটফর্ম নেটকম লার্নিং ইনকর্পোরেশন-এর স্থানীয় অঙ্গসংগঠন হলো নেটকম লার্নিং গ্লোবাল লিমিটেড। আজ এটুআই-এর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষরের মাধ্যমে সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ স্বপ্নের পথযাত্রায় সঙ্গী হতে পেরে আমরা উচ্ছ্বসিত। আশা করছি, এটুআই-এর সাথে সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি-নির্ভর স্মার্ট কর্মসংস্থান তৈরিতে অবদান রাখতে পারবো।
‘মুক্তপাঠ’-এ অনলাইনে সাধারণ শিক্ষা, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এপর্যন্ত ২৩ লক্ষেরও অধিক প্রশিক্ষণার্থী নিবন্ধিত রয়েছেন যারা ২৫০টিরও বেশি কোর্সে জ্ঞানার্জনের সুযোগ পাচ্ছেন। ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স ফর স্কিলস, এডুকেশন, এমপ্লয়মেন্ট এন্ড অন্ট্রাপ্রেনারশিপ-নাইস হলো বেকার যুব সম্প্রদায়কে বিভিন্ন ট্রেডে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দিয়ে
যথোপযুক্ত কর্মসংস্থান নিশ্চিতের জন্য তৈরি প্ল্যাটফর্ম। এই প্ল্যাটফর্মে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তোলার পাশাপাশি বিভিন্ন খাতে চাকুরির চাহিদা ও সম্ভাব্য সকল চাকরিদাতার খোঁজও পাওয়া যাচ্ছে। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের পাশাপাশি চাকরির বাজারেও এটি একটি রিয়েল টাইম সাপ্লাই ডিমান্ড প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে । বর্তমানে এই প্ল্যাটফর্মে ৮.১৭ লক্ষেরও অধিক নিবন্ধিত যুব, ১,৫৫১ নিবন্ধিত ইন্ডাস্ট্রি/ নিয়োগকর্তা এবং ৬০২টি নিবন্ধিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে।
উল্লেখ্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় বাস্তবায়নাধীন ও ইউএনডিপি’র সহায়তায় পরিচালিত এসপায়ার টু ইনোভেট-এটুআই বাংলাদেশ সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে বিভিন্ন উদ্ভাবনী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। নেটকম লার্নিং এর উদ্দেশ্য লাইফ-লং লার্নিং প্রোমোশনে কাজ করে যাওয়া। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত নেটকম লার্নিং ফরচুন এক হাজার কোম্পানিগুলোকে সহযোগিতা করেছে এবং এই পর্যন্ত ৪০ হাজারেরও বেশি প্রতিষ্ঠানকে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা দিয়েছে। তারা সাংগঠনিক বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কার্যকর ও গঠনমূলক সমাধান খুঁজে কর্মীদের সর্বোচ্চ কর্মক্ষমতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিতে পারদর্শী।
এসময় অনুষ্ঠানে এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজর জনাব আনীর চৌধুরী, পলিসি অ্যানালিস্ট ও হেড (ফিউচার অব এডুকেশন) মোঃ আফজাল হোসেন সারওয়ার, স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড ইনোভেশন স্পেশালিস্ট জনাব এইচ.এম. আসাদ-উজ-জামান, হেড (কমার্সিয়াল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি) রেজওয়ানুল হক জামি, হেড অব কালচার ও কমিউনিকেশনস পূরবী মতিনসহ নেটকম গ্লোবাল লার্নিং এবং এটুআই এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।