Sunday, October 6, 2024
spot_img
Homeবিশেষ প্রতিবেদনবাংলা ভাষাভিত্তিক সফটওয়্যার উন্মুক্ত এবং টেলিটকের ই-সিম উদ্বোধন করলেন - পলক

বাংলা ভাষাভিত্তিক সফটওয়্যার উন্মুক্ত এবং টেলিটকের ই-সিম উদ্বোধন করলেন – পলক

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে ভাষা শহিদ স্মরণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন বাংলা ভাষাভিত্তিক তিনটি সফটওয়্যার বাংলা টেক্সট টু স্পিচ “উচ্চারণ”, বাংলা স্পিচ টু টেক্সট “কথা” এবং বাংলা ওসিআর “বর্ণ” সহ নতুন একটি বাংলা ফন্ট “পূর্ণ” উন্মুক্ত করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এছাড়া, তিনি অমর একুশের ভাষা শহীদদের স্মরণে বিটিসিএল এর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ জিপন এর বিশেষ সাশ্রয়ী প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন ও টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের ই-সিম উদ্বোধন করেন।

প্রতিমন্ত্রী ঢাকায় বিসিসি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও ভাষা শহিদ স্মরণে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এসব অ্যাপস সমূহ ও বাংলা ফন্ট অবমুক্ত এবং টেলিটকের ই-সিম  উদ্বোধন করেন।

জুনাইদ আহমেদ পলক প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার প্রচলনকে বাংলা ও বাঙালি বিশেষ করে বিশ্বে ৩৫কোটি বাংলাভাষী মানুষের জন্য এক ঐতিহাসিক ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, স্মার্ট প্রযুক্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রজ্ঞাবান নেতৃত্বে বাংলা ভাষার বিকাশে এক নতুন মাত্রা সংযুক্ত হলো। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এবং শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির চেতনার বিকাশে একুশে ফেব্রুয়ারি যেন হাজার তারের বীণা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের এই সংগ্রামের মধ্য দিয়েই কিন্তু মূলত আমাদের স্বাধীনতা অর্জন। আমাদের স্বাধীনতার জন্ম রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের গর্ভ থেকেই। ১৯৫২ সালের সেই ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের ভেতর দিয়ে বাঙালি জাতিসত্তায় জন্ম নিয়েছিল একুশের চেতনা। এই চেতনা আমাদের জাতীয় জীবনে আত্মত্যাগের বীজমন্ত্র। ২০০০ সাল থেকে বিশ্বের ১৯৩টি রাষ্ট্রে মাতৃভাষার দাবিতে সংগ্রামরত পূর্ব বাংলার দামাল ছেলেদের কথা উচ্চারিত হচ্ছে। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হচ্ছে সেসব তরুণের আত্মদানের কথা। পরম শ্রদ্ধা ও গর্বের সঙ্গে স্মরণ করা হচ্ছে রফিক, আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস সালাম, শফিউর রহমান, ওয়ালিউল্লাহসহ নাম না জানা আরো অনেক শহিদকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্ব এবং আর্কিটেক্ট অব ডিজিটাল বাংলাদেশ সজীব ওয়াজেদ জয় এর পরামর্শে ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর গৃহীত ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়নের পর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অভিযাত্রা শুরু হয়েছে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় আগামী ৩০জুনের মধ্যে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের অধীন লোকসানী সকল প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক পর্যায়ে নিতে চাই। বিষয়টা কঠিন হলেও অসম্ভব হবে না বলে উল্লেখ করেন জুনাইদ আহেমেদ পলক। তিনি বলেন, বাঙালির পরিচয়ের মূলভিত্তি তার ভাষিক পরিচয়। আর্থ-সামাজিক জীবনে বাংলা ভাষা যথাযথ গুরুত্ব না পেলে তার শক্তি ক্রমশ দুর্বল হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য বাংলা টেক্সট টু স্পিচ “উচ্চারণ” হল একটি টিটিএস সফটওয়্যার। লেখাকে মেশিনের মাধ্যমে উচ্চারিত কথায় রূপান্তর করার প্রযুক্তিকে টিটিএস বা টেক্সট টু স্পিচ অ্যাপ্লিকেশন বলা হয়ে থাকে। টিটিএস ডকুমেন্ট, ওয়েবসাইট, স্ক্রিনের উইন্ডোতে থাকা টেক্সট পড়ে শোনাতে পারে। একই সঙ্গে তা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য উপযোগী হয়ে পড়ে শোনাতে পারে। উক্ত সফটওয়্যারটিতে মহিলা ও পুরুষ উভয় কণ্ঠই রয়েছে। বর্তমানে read.bangla.gov.bd ঠিকানা থেকে সফটওয়্যারটি ব্যবহার করা যাবে।

“কথা” হল বাংলা ভয়েস টাইপিং সফটওয়্যার। মুখের কথার মাধ্যমে কম্পিউটারে লেখার প্রযুক্তি হলো ভয়েস টাইপিং বা “স্পিচ টু টেক্সট”। এটি প্রমিত স্পষ্ট ও নীরব পরিবেশে উচ্চারিত বাংলা কথাকে লেখায় রূপান্তর করতে পারে। সফটওয়্যারটির চূড়ান্ত ভার্সন বাংলা প্রধান বিরাম চিহ্নগুলোকে লিপিবদ্ধ করতে পারে। ব্রাউজার থেকে একটি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন হিসেবে voice.bangla.gov.bd ঠিকানা লিখে সফটওয়্যারটি ব্যবহার করা যাবে। এছাড়াও, প্রকল্পের তৈরি কিউবোর্ড অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপের মাধ্যমেও এই ভযেস টাইপিং সার্ভিসটি ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে।

বাংলা ওসিআর এর নাম হল “বর্ণ”। ওসিআর-এর সাহায্যে কম্পিউটারের অপরিবর্তনযোগ্য ডকুমেন্টের লেখাকে এডিটেবল টেক্সটে রূপান্তর করা যায়। ওসিআর হলো পিডিএফ বা জেপেগ ফাইলের লেখাকে পরিবর্তনযোগ্য লেখায় রূপান্তর করা। এই বর্ণ ওসিআরটি বাংলা লেখাকে কম্পোজকৃত লেখার অনুরূপ টেক্সটে রূপান্তর করে থাকে। অর্থাৎ কোনো ডকুমেন্টকে ছবি তুলে বা স্ক্যান করে ওসিআর করলে তা কম্পোজড হয়ে যায়। বর্ণ ওসিআরটি বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি কম্পিউটার কম্পোজ ডকুমেন্ট বিশেষ করে সরকারি পত্র, বিজ্ঞপ্তি ওসিআর করতে পারে। এর মাধ্যমে টেবিল, কমন ইংরেজি শব্দ ও প্রতিষ্ঠানের নাম, সরকারি প্রতিষ্ঠানের লোগো শনাক্ত করা যায়। এছাড়াও, পুরোনো টাইপরাইটার ডকুমেন্ট ও লেটারপ্রেস বইও ওসিআর করতে পারে অ্যাপ্লিকেশনটি। ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন হিসেবে যেকোনো ব্রাউজার থেকে ocr.bangla.gov.bd ঠিকানা লিখে সফটওয়্যারটি ব্যবহার করা যায়।

“পূর্ণ” ফন্ট একটি অনন্য সাধারণ বাংলা ইউনিকোড ফন্ট যা ফন্ট সংক্রান্ত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার পর ডিজাইন ও ডেভেলপ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলা প্রকাশনায় প্রয়োজনীয় সকল টাইপোগ্রাফিক ফিচার। একই সঙ্গে বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্যকেও যথাযথভাবে প্রকাশ করছে এই ফন্ট। প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবহার ছাড়াও এই ফন্ট মুদ্রণ কাজে এবং ওয়েবে ব্যবহার উপযোগী। ফন্টে স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ, বিরাম চিহ্ন, ইংরেজি বর্ণ, গাণিতিক চিহ্ন, অসমীয়া স্বতন্ত্র সেট, ইন্ডিক-বাংলা সমর্থনকারী গ্লিফ, হোমোগ্রাফ, জনপ্রিয় আইকন/লোগোসহ প্রয়োজনীয় সকল গ্লিফ রয়েছে। ইত্যাদি ফন্টটি কিছু বৈশিষ্ট্যে রয়েছে। যেমন, স্বতন্ত্র ভিজুয়াল রূপ, একাধিক অ্যালোগ্রাফ, ল্যাটিন গ্লিফের সমতুল্য উচ্চতা, স্ট্যান্ডার্ড লাইন স্পেস এবং আকার এবং অপ্টিমাইজ করা গ্লিফ নম্বর, স্বচ্ছ ও সনাতন যুক্তবর্ণ উভয়ের সংযুক্তি ইত্যাদি। ফন্টটির স্বাভাবিক ভার্সন ছাড়াও বোল্ড, ইটালিক রূপ রয়েছে। ফন্টটি https://bangla.gov.bd/fonts/ ঠিকানা থেকে ডাউনলোড করা যাবে।

জুনাইদ আহমেদ পলক জানান, বিটিসিএল এর ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ জিপন এর বিশেষ সাশ্রয়ী প্যাকেজের আওতায় ৫ এমবিপিএস এর বিদ্যমান মূল্যে ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে, ৩৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন সাশ্রয়ী এই প্যাকেজের আওতায় ১০ এমবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউডথ পাওয়া যাবে ৫০০ টাকায়। ১০ এমবিপিএস ইন্টারনেটের বিদ্যমান মূল্য ৮০০ টাকা। এখন থেকে ১৫ এমবিপিএস পাওয়া যাবে ৮০০ টাকায়। ১৫ এমবিপিএস বিদ্যমান মূল্য ১০৫০ টাকা, এখন থেকে সমপরিমান টাকা অর্থাৎ ১০৫০ টাকায় পাওয়া যাবে ২০ এমবিপিএস।বিদ্যমান মূল্যে ২০ এমবিপিএস এর দাম ছিলো ১২৫০ টাকা। বিদ্যমান মূল্যে ২৫ এমবিপিএসের দাম ১৪৫০ টাকা। ২৫ এমবিপিএস এর পরিবর্তিত প্যাকেজ মূল্য ১৩০০ টাকা। ৩০ এমবিপিএস এর বিদ্যমান মূল্য ১৬৫০ টাকা। পরিবর্তিত মুল্য নির্ধারিত করা হয়েছে ১৫০০ টাকা। ৪০ এমবিপিএস এর মূল্য ২০৫০ টাকা, পরিবর্তিত মূল্য ২০০০ টাকা। ৫০ এমবিপিএস এর বিদ্যমান মূল্য ২৪৫০ টাকা্, পরিবর্তিত দাম রাখা হয়েছে ২৪০০ টাকা। এ সুযোগ সীমিত সময়ের জন্য প্রযোজ্য হবে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ই-সিম হলো এমবেডেড সাবস্ক্রাইবার আইডেন্টিটি মডিউল। এটি ফিজিক্যাল সিম কার্ডের মতো নয়। এটি ফোনে ইনস্টল করা ভার্চুয়াল সিম, যেটি কোন মোবাইল অপারেটরের মাধ্যমে তৃতীয় পক্ষীয় সফটওয়্যারের সহায়তায় মোবাইল নম্বর বরাদ্দপূর্বক অনলাইনে সক্রিয় করা হয়। ই-সিমের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, বারবার খোলার ঝামেলাই যেহেতু নেই, তাই এ সিম নষ্ট হওয়ারও আশঙ্কা নেই। এ ছাড়া একই সঙ্গে একাধিক নম্বর ব্যবহার করা যায়। ব্রান্ডভেদে একসঙ্গে এক ফোনে পাঁচটি পর্যন্ত ই-সিম ব্যবহার করা যায়। প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে ই-সিমের ব্যবহার বেড়ে হবে ৩.৪ বিলিয়ন।

বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহি পরিচালক  রণজিৎ কুমার এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো: সামসুল আরেফিন, বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌ: মো: মহিউদ্দিন আহমেদ এবং বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

এর আগে পুস্পস্তবক অর্পনের মধ্য দিয়ে অমর ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রতিমন্ত্রী। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব এবং আইসিটি বিভাগের সচিব সহ ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ও অধীন দপ্তর ও সংস্থাসমূহের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

spot_img
আরও পড়ুন
- Advertisment -spot_img

সর্বাাধিক পঠিত

spot_img